বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ৫০ বিলিয়ন ডলারের দিকে ছুটতে থাকার মধ্যে এখন ৩৭ বিলিয়নে নেমে আসায় সরকারকে টিপ্পনি কেটেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, ‘রিজার্ভ নিয়ে সরকার বেশ লাফালাফি করেছিল। রিজার্ভ কমতে কমতে কমে আসছে। যা তিন মাস ও চলবে না।
‘ব্যাংক খালি করে দিয়েছে। সাধারণ মানুষ ব্যাংকের নিরাপদ বোধ করছে না। বিদেশি বিনিয়োগ নেই। গত বছর বাংলাদেশ থেকে ৮৫ হাজার কোটি টাকা সরকারের লোকজন পাচার করেছে।’
রোববার বিকেলে আব্দুল্লাহপুর পলওয়েল মার্কেটের সামনে বিএনপি ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর দেশে দেশে রিজার্ভে টান পড়ার যে প্রবণতা, তা থেকে বাইরে নয় বাংলাদেশও। গত অর্থবছরে ডলার ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার পর তার ৫০ বিলিয়নের মাইলফলক ছুঁয়ে যাবে বলে আশার কথা বলা হচ্ছিল সরকারের পক্ষ থেকে।
তবে আমদানিতে অতিরিক্ত ব্যয়ের কারণে এখন রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধির পরও রিজার্ভ ক্রমেই কমছে। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) বিল পরিশোধের পর গত ৯ অক্টোবর তা নামে ৩৭ দশমিক শূন্য ছয় বিলিয়ন ডলারে, যা গত ২৬ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
একটি দেশের তিন মাসের আমদানি ব্যয়ে মেটানোর মতো রিজার্ভ থাকাকে মান হিসেবে ধরা হয়। বাংলাদেশের বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে চলা যাবে ছয় মাস।
রিজার্ভ কমলেও তা বিএনপির শাসনামলের শেষ বছর ২০০৬-০৭ সালের তুলনায় এখনও সাত গুণের বেশি। ওই বছর বিজার্ভ ছিল পাঁচ বিলিয়ন ডলারের নিচে।
সরকার অর্থনীতি ধ্বংস করে দিয়েছে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা ভালো নাই। ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিএনপির গন্ধ থাকে তাদের ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দেবে।’
বিএনপি নেতার অভিযোগ, গত ১৫ বছরে এই সরকার সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে ফেলেছে। তিনি বলেন, ‘পার্লামেন্ট আছে যেটাকে আমরা রাবার স্টাম্প পার্লামেন্ট বলি। সংসদে জনগণের বিষয় নিয়ে কথা হয় না একজনকে নিয়ে শুধু মাত্র তোষামতি হয়। বিচার বিভাগে মানুষ বিচার পায় না। অন্যায়ভাবে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দেয়া হয়েছে। কারণ, বেগম খালেদা জিয়াকে সরকার ভয় পায়। বেগম খালেদা জিয়া রাস্তায় নামলে হ্যামিলিয়নের বাঁশিওয়ালার মতো লক্ষ লক্ষ মানুষ রাজপথে নামবে।’
র্যাবের মতো নিষেধাজ্ঞা আসবে অন্য বাহিনীর ওপরও–
র্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘র্যাবের মতো যে কোনো বাহিনীর উপর স্যাংশন আসতে পারে তা যদি আইন না মেনে মানবাধিকার লংঘন করে।’
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র র্যাবের ৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্যাংশন দিয়েছে। এটা জাতির জন্য লজ্জার। অথচ তাদের লজ্জা হয় না। তারা তাকে নিয়ে লাফালাফি করে।’
নারায়ণগঞ্জে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে এক গোয়েন্দা কর্মকর্তার রাইফেল ব্যবহার নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের পুলিশের কাছে চাইনিজ রাইফেল কীভাবে গেল এটার ব্যাখ্যা আমরা এখন পর্যন্ত সরকারের কাছ থেকে পাইনি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে পাইনি।’
সরকারের বিরুদ্ধে মানুষ গর্জে উঠেছে বলেও মনে করেন ফখরুল। বলেন, ‘তাই ভোলায় রহিম প্রাণ দিতে দ্বিধা করেনি। আমরাও কেউ প্রাণ দিতে দ্বিধা করব না।
‘আমাদের লক্ষ্য একটা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা। এই মুহূর্তে সরকারকে পদত্যাগ করানো। আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। আন্দোলনে আমাদের বিজয় নিশ্চিত।’
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে, হাসিনা সরকার থাকলে দেশে নির্বাচন হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচন হতে হবে।’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়যক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য রাখেন।