‘সিত্রাং’ খুবই শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসে ভাসবে উপকূল: গবেষক

পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরের অবস্থানরত নিম্নচাপটি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে রোববার সকালে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে সোমবার দুপুরে স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে। এটি সুপার সাইক্লোন নয়। সিত্রাং ‘ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ অর্থ্যাৎ খুবই শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার হতে পারে। সাত ক্যাটাগরির ঘূর্ণিঝড় আছে। শক্তির দিক থেকে সিত্রাং তিন নম্বর। সোমবার দিবাগত রাত অমাবস্যা হওয়ায় উপকূলীয় এলাকা ও চরাঞ্চলগুলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে ১০ থেকে ১২ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা দেখা আছে। এই জলোচ্ছ্বাসের তীব্রতা হবে অনেক বেশি।

- Advertisement -

কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ সোমবার বিকেলে টেলিফোনে সমকালকে এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, জাপানের কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, বঙ্গোপসাগরের গভীর নিম্নচাপটি ২ ভাগে বিভক্ত হয়েছে। এর একটি অংশ ভারতের ওড়িশা রাজ্যের বিশাখাপত্তম বন্দরের পূর্ব দিকে এবং অন্য অংশ আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপপুঞ্জের উত্তর-পশ্চিম দিকে অবস্থান করছে। দুই অংশে বিভক্ত হয়ে যাওয়ার কারণে নিম্নচাপটি অনেক দুর্বল হয়ে গেছে। দুই অংশই স্বাধীনভাবে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু শক্তি ভাগ হয়ে যাওয়ার কারণে কোনো অংশই আজ দুপুর পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারছে না।

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, ঘূর্ণিঝড়টির ঠিক উপরের আকাশে বায়ু শিয়ারের যে মান, তা ঘূর্ণিঝড়টিকে সংগঠিত হতে বাধা দিচ্ছে। এই বায়ু শিয়ারের মান যদি অনুকূল থাকত (৫ থেকে ১৫ নটিক্যাল মাইল বা ৯ থেকে ২৮ কিলোমিটার এর মধ্যে) তবে নিম্নচাপটি এরমধ্যেই অনেক শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতো। বায়ু শিয়ার অত্যন্ত বেশি (৫৫ কিলোমিটার) থাকার কারণে নিম্নচাপটির জায়গায় যে উঁচু মেঘের সৃষ্টি হচ্ছে, উচ্চ গতির বাতাস সেই মেঘকে সঙ্গে সঙ্গে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র পুরো বরিশাল বিভাগ ও চট্টগ্রাম বিভাগের নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলার ওপর দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়বে খুলনা বিভাগের উপকূলেও। স্থলভাগে আঘাত করার সময় বাতাসের গতিবেগ থাকতে পারে ৯০ থেকে ১১০ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড়টি বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের ওপর দিয়ে প্রবেশ করে ঢাকা বিভাগ ও চট্টগ্রাম বিভাগের ওপর দিয়ে অতিক্রম করে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টির স্থলভাগে প্রবেশের সম্ভাব্য সময় সোমবার সকাল ৯টার পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। বাংলাদেশ অতিক্রম করতে ১৮ ঘণ্টা থেকে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। ২৪ অক্টোবর দিবাগত রাত অমাবস্যা হওয়ায় উপকূলীয় এলাকা ও চরাঞ্চলগুলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে ৭ থেকে ১০ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। নোয়াখালীর ভাসানচর, হাতিয়া, সুবর্ণচর, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও ভোলার মনপুরায় ১০-১২ ফুট উচ্ছতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। সিডরের পর উপকূলীয় এলাকায় সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হতে পারে সিত্রাং।

মোস্তফা কামাল আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের ভারী বৃষ্টি, শক্তিশালী বাতাস ও জলোচ্ছ্বাসে উপকূলে ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। ফলে দ্রুত উপকূলের মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া দরকার। না হলে শেষ সময়ে জলোচ্ছ্বাসের তীব্রতায় মানুষ টিকতে পারবে না।

সর্বশেষ