spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

চট্টগ্রামে বেসরকারি হাসপাতালে ধর্মঘট স্থগিত : চিকিৎসাসেবা শুরু

spot_img

মো.মুক্তার হোসেন বাবু : ব্যাপক অনিয়মের আখড়া বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতাল ও সিএসসিআর র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার পর পর সকল বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা বন্ধ ঘোষণার ২১ ঘন্টা পর তা স্থগিত করা হয়েছে। বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান সমিতির ডাকে নগরীর সব প্রাইভেট মেডিকেল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ ঘোষণার পর ওই ধর্মঘট গতকাল সোমবার স্থগিত করায় বিপাকে পড়া অসহায় রোগিরা জিন্মিদশা থেকে মুক্তি পেলেন এমনটি বলেছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে গত রোববার ধর্মঘট ডাক দেয়ার পর থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বাড়তে থাকে রোগীর ভর্তির সংখ্যা। গতকাল সোমবার বেলা ১২টার দিকে এ ধর্মঘট স্থগিত করা হয়।
বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান সমিতির সভাপতি ডা. আবুল কাশেম বলেন, পরিবেশ-পরিস্থিতি ও রোগীদের দুর্ভোগের বিষয় চিন্তা করে আমরা চট্টগ্রামের সকল বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডাকা ধর্মঘট সাময়িক স্থগিত করেছি। তিনি বলেন, এসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আমরা সুষ্ঠুভাবে চালাতে চাই। এসব প্রতিষ্ঠানের ভুল-ভ্রান্তি আমরা সংশোধন করবো। কিন্তু এসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে যদি লাখ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। তা পরিশোধ কীভাবে করবে? এসব বিবেচনায় আমরা রোববার বিকেল ৫ টায় ধর্মঘট ডেকেছিলাম। সাময়িক দুর্ভোগের জন্য আমরা রোগীদের কাছে ক্ষমা চাই।
এর আগে গত রোববার ম্যাক্স হাসপাতালসহ নগরের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে র‌্যাবের অভিযানের পর হঠাৎ করে চট্টগ্রামে স্বাস্থ্যসেবার বন্ধের ঘোষণা দেন বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান সমিতি। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রাম জেলার নেতারা এ স্বাস্থ্যসেবা বন্ধের ঘোষণার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। এরপর থেকেই নগরসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো বন্ধ থাকায় সেবাপ্রার্থীরা সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন। বিশেষ করে রোগীদের জরুরি সেবাও তারা দেয়নি। শেষ ভরসা হিসেবে মানুষ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ(চমেক) হাসপাতালের দিকেই ছুটেছেন। যার ফলে গত রোববার বিকেল ৫টা থেকে গতকাল সোমবার দুপুর ১টা পর্যন্ত সাড়ে ৪ হাজার রোগী চমেক হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন। চিকিৎসকদের এই কর্মসুচিকে অনৈতিক ও অমানবিক বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা ঝড় উঠে।
গতকাল সোমবার সকালে সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান সমিতির ডাকে নগরীর সব প্রাইভেট মেডিকেল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ ঘোষণা করায় বিপাকে পড়েছে অসহায় রোগিরা। ডাক্তারের খোঁজে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটেছেন তারা। রোববার সন্ধ্যা থেকে প্রায় সব প্রাইভেট মেডিকেল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোগীর প্রচুর চাপ দেখা যায়।
সকাল সাড়ে ১০ টায় দেখা যায়, বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিক নতুন কোন রোগী ভর্তি না করার পাশাপাশি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টেস্ট দিয়ে আসা রোগীরাও তাদের রিপোর্ট পায়নি। এমতাবস্থায় জরুরি রোগীদের চিকিৎসাও ব্যাহত হয়। ইতিমধ্যে ভর্তি হওয়া রোগীরাও টেস্ট রিপোর্টের অভাবে চিকিৎসা নিতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় রোগির উপচে পরা ভিড়। নগরীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে তারা শেষ ভরসা হিসেবে চমেকে আসতে থাকে। রোগির ভিড় সামলাতে চমেকের জরুরি বিভাগে আনসারদের মাইকিং করতেও দেখা গেছে। তারা এম্বুলেন্স ও অন্যান্য গাড়িকে মাইকিং করে মুল ফটক খালি রাখার অনুরোধও জানান। এছাড়া জরুরি বিভাগে পর্যাপ্ত ট্রলি, হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করতেও দেখা যায়।
চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, রোগী বাড়লেও সকলের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে। যতো রোগী হোক, কেউ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হবে না। হাসপাতালে দেখা যায়, অর্থোপেডিক বিভাগ, শিশু রোগ বিভাগ, সার্জারি বিভাগ, হৃদরোগ বিভাগসহ হাসপাতালের ৪০টি ওয়ার্ড ও বিভাগে রোগীর ভর্তির সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। জরুরি বিভাগের টিকিট কাউন্টারে দায়িত্বরত কর্মকর্তা নাছির উদ্দিন বলেন, প্রতিদিন সাধারণত জরুরি বিভাগে প্রায় ৬০০ রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। কিন্তু রোববার বিকেল ৫টা থেকে আজ (গতকাল) সোমবার দুপুর ১টা পর্যন্ত ১১০০ রোগী এসেছেন। এরমধ্যে সোমবার সকালে এসেছেন ৫০০ রোগী। চমেক হাসপাতালের ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার ডা. বহ্নি চক্রবর্তী বলেন, আউটডোর-ইনডোর মিলে সাড়ে ৪ হাজার রোগী দুপুর পর্যন্ত চিকিৎসাসেবা নিতে এসেছেন। অন্যসময় আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন।

spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

সর্বশেষ