শনিবার, ২৫ জানুয়ারি ২০২৫
spot_img

একরামুল হত্যার তদন্তে তালা বন্ধ!

 

- Advertisement -

কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত টেকনাফের কাউন্সিলর ও উপজেলার যুবলীগের সাবেক সভাপতি একরামুল হক হত্যা ঘটনার তদন্ত যেন তালা বন্ধ হয়ে আছে। এই ঘটনা সারাদেশে সমালোচনার ঝড় উঠলেও এখন অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে গেছে। বিশেষ করে কোটা সংস্কার আন্দোলনের আড়ালে চলে গেছে এই হত্যা তদন্ত।

বিশিষ্টজনেরা মনে করেন, একরামুলকে হত্যার পর এই অভিযান অনেকটাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। তদন্তের নামে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কথা বলা হলেও এখন অনেকটাই ধামাচাপা পড়ে গেছে। যদিও গণমাধ্যমে ইকরামুল হত্যার অডিও ক্লিপ আসার পর জনগণের মাঝে এই হত্যার ঘটনা পরিষ্কার হয়ে উঠে। তারপরেও সরকারের দায়িত্ব এর যথাযথ তদন্ত করে জনগণের সামনে উপস্থাপন করা।

তদন্তের ব্যাপারে স্বরাষ্টমন্ত্রীর বলেছিলেন, ‘আমরা বিষয়টি তদন্ত করব। একজন ম্যাজিস্ট্রেট বিষয়টি তদন্ত করবেন, তিনি যদি মনে করেন ওই বন্দুকযুদ্ধে বেআইনি কিছু হয়েছে, তবে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই কথার পর এই ব্যাপারে এখনো আপডেট কিছু জানানো হয়নি।

এদিকে একরামুল হত্যার ঘটনায় ১৪ মিনিট ২২ সেকেন্ডের একটি অডিও ক্লিপ সামনে আসে। ডেইলি স্টার পত্রিকা সেই অডিও ক্লিপ প্রকাশ করার পরেই সারাদেশে সমালোচনার ঝড় উঠে।

একরামের স্ত্রী দাবি করেছিলেন, তার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত যে তথ্য আছে, তাতে এ ধরনের কোনও আভাস পাওয়া যায়নি। তবে একরামের স্ত্রী যেটা বলেছেন, তা আমরা তদন্ত করে দেখবো।

তারপর (২ জুন) আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, একরামুল নিহতের ঘটনায় যে অডিও রেকর্ড প্রকাশ হয়েছে সেটি ভিকটিমও (একরামের পরিবার) তো আমাদের কাছে সরবরাহ করতে পারত। অফিসিয়ালি রেকর্ডটি আমাদের কেউ সরবরাহ করেনি এমনকি এ বিষয়ে কেউ কোন তথ্যও দেননি। কাজেই আমাদের কাছে এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই।

মন্ত্রী বলেছেন, একরামুলের পরিবারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো অভিযোগ না পাওয়া গেলেও একজন ম্যাজিস্ট্রেট একরাম নিহত হওয়ার ঘটনাটি তদন্ত করবেন। তদন্ত শেষে ওই ম্যাজিস্ট্রেট যে রিপোর্ট দেবেন তার ভিত্তিতেই জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মন্ত্রী আরো বলেছেন, আমাদের কেউই আইনের উর্ধ্বে নয়। আইন অনুযায়ী যদি কেউ ইচ্ছাপূর্বক এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকে তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তারপরের দিন রবিবার (৩ জুন) স্বরাষ্টমন্ত্রী বলেন, একরামুল হক নিহত হওয়ার ঘটনায় যে অডিও রেকর্ড প্রকাশ হয়েছে তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পৌঁছেছে। এরই মধ্যে অডিওটি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। একজন ম্যাজিস্ট্রেট তদন্ত দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তারা কাজ শুরু করে দিয়েছেন। অডিও ক্লিপগুলো সংগ্রহ করা হচ্ছে।

তারপর এ নিয়ে এখন পর্যন্ত আর কোন কথা বলেননি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বিশিষ্টজনেরা বলছেন, সাগর-রুনি ও নারায়ণগঞ্জের ৭ খুনের মতো অনেক হত্যার তদন্ত এখনো ঝুঁলে আছে। সরকারের পক্ষ থেকে এসব ব্যাপারে তেমন কিছু বলা হচ্ছে না। এই হত্যাগুলোর রহস্যও আড়ালে চলে গেছে। একরামুল হকের তদন্ত যেন তাদের মতো আড়ালে চলে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

অন্যদিকে জানা গেছে, একরামের স্ত্রী এখন তার মোবাইল ফোনটি আর অন করেন না। আর অধিকাংশ সময় তিনি তাঁর দুই মেয়েকে নিয়ে চট্টগ্রামে থাকেন।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ মে টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা একরামুল হক নিহত হন। পরিবারের অভিযোগ, একরামুলকে বাসা থেকে গিয়ে হত্যা করা হয়েছে। একরামুলের পরিচিত লোকজন ও রাজনৈতিক সহকর্মীদের দাবি, ইয়াবা বা কোনো ধরনের মাদক ব্যবসায় তার সংশ্লিষ্টতা ছিল না। তারা এই ‘হত্যাকাণ্ডের’ বিচার চেয়েছেন।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন এবং বিভিন্ন বিদেশি দূতাবাস মাদকবিরোধী অভিযানে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার ঘটনার তীব্র সমালোচনা করে এ অভিযান বন্ধের দাবি জানায়।

একরামুল নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে তার স্ত্রী মোট ১৪ মিনিট ২২ সেকেন্ডের ফোনালাপের চারটি অডিও ক্লিপ প্রকাশ করেন। অডিওগুলো নিয়ে প্রকাশিত খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়।

তবে র‍্যাব বলে আসছে, একরামুল তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী। ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সে নিহত হয়েছে। সেই সঙ্গে অডিও ক্লিপগুলো বাহিনীটি খতিয়ে দেখছে বলেও জানানো হয়েছে।

সর্বশেষ