নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রায় ১ যুগ পর নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের জন্য জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। গত পহেলা ফেব্রুয়ারিতে সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা না করে, সাংগঠনিক গতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য জীবন বৃত্তান্ত আহ্বান করা হয়। আর এর মাধ্যমে দীর্ঘ সময় পর নগর ছাত্রলীগের বিভিন্ন কলেজ-থানা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মাঝে আনন্দের পরিবেশ সৃষ্ট হয়, ঢাকার গুলিস্তানে অবস্থিত ছাত্রলীগের দলীয় কার্যালয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিতে অংশ নেন এসএসসি ২০০৩ এর ব্যাচ থেকে ২০২৩ ব্যাচের নেতারা, মহানগর ছাত্রলীগের পদ পেতে এক কাতারে এখন ২০ বছর ব্যবধানের ছাত্রলীগ নেতারা। মূল পদ সহ বিভিন্ন পদ নিশ্চিত করতে ঢাকায় বিভিন্ন ভাবে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন প্রায় সকল পদপ্রত্যাশী। আলোচনায় আছেন যারা শিক্ষাবর্ষ,বয়স, নিয়মিত ছাত্রত্ব বিবেচনায় বাদ যেতে পারেন বেশিরভাগ নেতারা। জাতীয় পরিচয় পত্রের বয়স কমিয়ে অনেকে নেতা হতে দৌড়ঝাপ দিচ্ছৈন এই খবরও চাউর হচ্ছে অনেক সময়। মূল পদ পাওয়ার দৌড়ে আলোচনায় আছেন যারা :
➡️সিটি বলয়:
*আরাফাত রুবেল (এসএসসি-২০১০)
সদস্য, চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ দপ্তর সেল।
চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের দায়িত্ব পাওয়ার দৌড়ে আলোচনায় আছেন আরফাত রুবেল, নগর ছাত্রলীগের সিটি ব্লকের প্রায় সকল সিনিয়র নেতাদের পছন্দের আরফাত রুবেল পেতে পারেন কাঙ্খিত পদ।
*আশীষ সরকার নয়ন(এসএসসি-২০১৪)
আহবায়ক, সিটি কলেজ ছাত্রলীগ।
সিটি কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক(নৈশ) পদে এসে প্রথমে আলোচনায় তরুণ এই ছাত্রলীগ নেতা। বয়স ও নিয়মিত ছাত্র বিবেচনায় সকল নেতাদের পছন্দের শীর্ষে থাকতে পারেন এই নেতা। সর্বমহলে আলোচনা হয় নগর ছাত্রলীগের দায়িত্ব পেতে পারেন আশীষ সরকার নয়ন।
*মোহাম্মদ তাহসিন (এসএসসি-২০১৫)
ভিপি, সিটি কলেজ সংসদ।
প্রচন্ড আলোচনায় থাকা তাহসিন কিছুদিন আগেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পাওয়া কিছু ভিডিও চিত্রের কারণে সমালোচিত হন। তরুণ,স্মার্ট ও নিয়মিত ছাত্র হিসাবে নগরে শীর্ষ পদ পাওয়ার দৌড়ে ভালো ভাবে আছেন তাহসিন। জানা যায় সিটি বলয়ের বৃহত একটি অংশ তাহসিনকে মূল পদে আনতে চেষ্টা করছেন।
*সাঈদ ইবনু জামান ডায়মন্ড(এসএসসি-২০১২)
জিএস-ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদ।
ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে নগর রাজনীতিতে পরিচিত মুখ ডায়মন্ড। তরুণ ও দক্ষ ছাত্রনেতা হিসাবে সকলের পছন্দের তালিকায় আছেন তিনি। ইসলামিয়া কলেজের হওয়া সত্ত্বেও সিটি বলয়ের প্রায় সব নেতার পছন্দের প্রার্থী হিসাবে বেশ আলোচিত ডায়মন্ড। পেতে পারেন নগর ছাত্রলীগের মূল দায়িত্ব।
*মীর মুহাম্মদ ইমতিয়াজ(এসএসসি-২০১২)
সাধারণ সম্পাদক-ইসলামিয়া কলেজ ছাত্রলীগ।
মূল পদ পাওয়ার লড়াইয়ে সিটি বলয় থেকে সিটি কলেজর প্রধান বাঁধা হয়ে যাওয়া ইসলামিয়া কলেজের আলোচিত প্রার্থী ইমতিয়াজ। ইসলামিয়া কলেজ থেকে নগর ছাত্রলীগ সবার প্রিয় ও পছন্দের প্রার্থী ইমতিয়াজ। একজন দক্ষ ও মিষ্টিভাষী ছাত্রনেতা হিসাবেও পরিচিত তিনি। জোর গুঞ্জন শুনা যায়, বিভিন্ন সমিকরণে মহানগর ছাত্রলীগের দায়িত্ব পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন ইমতিয়াজ।
➡️এমইএস বলয়:
*মিজানুর রহমান(এসএসসি-২০১০)
সদস্য, মহানগর ছাত্রলীগ ও আহ্বায়ক, বাকলিয়া থানা ছাত্রলীগ।
মহানগর ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে কেন্দ্র করে পুরো নগরে আলোচিত একটি নাম মিজান। শিক্ষামন্ত্রীর একান্ত আস্থাবাজন ও নগর ছাত্রলীগের সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরের পছন্দের প্রার্থী হিসাবে পরিচিত মিজান পেতে পারেন নগর ছাত্রলীগের চালকের দায়িত্ব। বিভিন্ন সময় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে খবরের শিরোনামে আসলেও এখন তিনি আছেন নগর ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদক হওয়ার দৌড়ের শিরোনামে। ব্যাটে-বলে টাইমিং মিললে পেতে পারেন নগর ছাত্রলীগের গুরু দায়িত্ব।
*হাসমত খান আতিফ (এসএসসি-২০১২)
সহ-সভাপতি, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগ ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, কোতোয়ালী থানা ছাত্রলীগ।
নগর থেকে কেন্দ্র সর্বত্র জোর আলোচনায় আছেন কখনো কোন ইউনিটের মূল দায়িত্বে না পাওয়া ও বয়স্ক পদপ্রত্যাশীদের “গলার কাঁটা” হিসাবে পরিচিত পাওয়া আতিফ। স্মার্ট, মেধাবী ও সৃজনশীল ছাত্রনেতা হিসাবে পুরো নগরে আলোচিত আতিফ আসতে পারেন নগর ছাত্রলীগের শীর্ষপদে। শিক্ষামন্ত্রীর একনিষ্ট অনুসারী ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পছন্দের ছাত্রনেতা হিসাবে নগর ছাত্রলীগের কান্ডারি হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন তরুণ ছাত্রনেতা আতিফ। সামগ্রিক দিক বিবেচনায় হতে পারেন নগর ছাত্রলীগের কান্ডারি।
*আনোয়ার হোসেন পলাশ(এসএসসি-২০১০)
যুগ্ম-আহ্বায়ক, মহসিন কলেজ ছাত্রলীগ।
নগর ছাত্রলীগকে কেন্দ্র করে মহসিন কলেজের জনপ্রিয় মুখ আনোয়ার হোসেন পলাশ আছেন আলোচনায়। শিক্ষামন্ত্রীর অনুসারী হিসাবে পরিচিত দক্ষ এই ছাত্রনেতা পেতে পারেন নগর ছাত্রলীগের মূল দায়িত্ব। সাম্প্রতিক সময়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থান করা এই ছাত্রনেতাও পেতে পারেন নগর ছাত্রলীগের শীর্ষ অবস্থান।
*জাহিদুল ইসলাম প্রমি(এসএসসি-২০০৯)
কর্মী, এমইএস কলেজ ছাত্রলীগ।
নগর ছাত্রলীগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের পরিচিত মুখ প্রমি। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনায় থাকেন শিক্ষামন্ত্রীর অনুসারী হিসাবে পরিচিত প্রমি। সাম্প্রতিক সময়ে নগর ছাত্রলীগ নিয়ে নেতা-কর্মীদের আলোচনায় উঠে আসছে প্রমির নাম। দীর্ঘদিন যাবত রাজনীতিতে সম্প্রিক্ত থাকার ফল হিসাবে পেতে পারেন নগর ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদকের দায়িত্ব।
আ.জ.ম নাসির বলয়:
*বোরহান উদ্দীন(এসএসসি-২০১২)
যুগ্ম-আহ্বায়ক, মহসিন কলেজ ছাত্রলীগ।
কখনো নগর ছাত্রলীগের কমিটিতে ভাগ না পাওয়া মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পদকের আ.জ.ম নাসির উদ্দীনের অনুসারি হিসাবে পরিচিত মহসিন কলেজের ছাত্রনেতা বোরহান। আলোচনায় শুনা যাচ্ছে যদি তার বলয় সভাপতি-সম্পদক পদ পান সেই ক্ষেত্রে চালকের আসনে বসতে পারেন তিনি।
*রাশেদ চৌধুরী(এসএসসি-২০১০)
কর্মী, কমার্স কলেজ
আ.জ.ম নাসিরের অনুসারী হিসাবে পরিচিত রাশেদ চৌধুরী কেন্দ্র থেকে মহানগর সর্বত্র পদ পেতে চেষ্টা করছেন বলে শুনা যায়। কমার্স কলেজের সাবেক কর্মী রাশেদ, যুবলীগ নেতা দিদারের অনুসারী হিসাবেও পরিচিত। দীর্ঘ সময় নগর ছাত্রলীগের বাহিরে থেকে রাজনীতি করে নগরের নেতা হওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি।
উল্লেখিত ছাত্রলীগ নেতা ছাড়াও আরো আলোচনায় আছেন বেশ কিছু পরিচত মুখ। কিন্তু এদের বেশিরভাগ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বয়স, শিক্ষাবর্ষ, নিয়মিত ছাত্রত্ব এসব বিষয় বিবেচনা করলে বাদ পড়তে পারেন। এমনকি বেশিরভাগ পদপ্রত্যাশীরা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান থেকেও জ্যেষ্ঠ। বয়স ও শিক্ষাবর্ষ গুরুত্ব না পেলে সভাপতি-সম্পাদকের দায়িত্বে আসতে পারেন যারা:
মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক, কাজী নাঈম(এসএসসি-২০০৫)। চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি, মাহমুদুল করিম(এসএসসি-২০০৮)। চান্দগাঁও থানা ছাত্রলীগের সভাপতি, নুরন্নবী শাহেদ(এসএসসি-২০০৭)। নগর ছাত্রলীগ দপ্তর সেলের সদস্য, মোশারফ চৌধুরী পাবেল(এসএসসি-২০০৭)। কমার্স কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি, ফখরুল রুবেল(এসএসসি-২০০৭)। কমার্স কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, (আরিফুল আলম আলবী(এসএসসি-২০০৯)। ডবলমুড়িং থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, রাকিব হায়দার(এসএসসি-২০০৭)। ইসলামিয়া কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি, রাকিবুল ইসলাম রাকিব(এসএসসি-২০০৫)। পতেঙ্গা থানা ছাত্রলীগের সভাপতি, হাসান হাবিব সেতু(এসএসসি-২০০৯)। নগর ছাত্রলীগের সদস্য, শেখ সপৎরফুদ্দীন সৌরভ(এসএসসি-২০০৮)। চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি, মনিরুল ইসলাম মনির(এসএসসি-২০০৯)। মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক, মায়মুন উদ্দীন মামুন(এসএসসি-২০০৯), চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ-সম্পাদক, সুভাষ মল্লিক সবুজ(এসএসসি-২০০৬)।
এছাড়া আরো কিছু ছাত্রলীগ নেতা নিজ নিজ জায়গা থেকে চেষ্টা করছেন।
প্রসঙ্গত, কেন্দ্র থেকে ২০১৩ সালে ইমরান আহমেদ ইমুকে সভাপতি ও নুরুল আজিম রনিকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৪ জনের আংশিক কমিটি দেওয়া হয়। এরপর ২০১৪ সালের ১১ জুলাই ওই ২৪ জনসহ ২৯১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ নগর ছাত্রলীগের কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। বিভিন্ন ঘটনায় আলোচিত-সমালোচিত হওয়ার পর ২০১৮ সালের ১৯ এপ্রিল ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন নুরুল আজিম রনি। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর। পরবর্তীতে তাকেও ভারমুক্তও করা হয়। তিনি প্রায় ৬ বছর যাবত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।