গত সপ্তাহে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ পর্যটক প্রাণ হারান। এই ঘটনা ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী ও কূটনীতিকদের মনে ‘দেজা ভ্যু’ বা পুরোনো ঘটনার পুনরাবৃত্তির এক ভয়াবহ অনুভূতি ফিরিয়ে এনেছে। এমন পরিস্থিতি বহুল পরিচিত। ২০১৬ সালে উরিতে ১৯ সেনা নিহত হওয়ার পর নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) পেরিয়ে পাকিস্তানে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালায় ভারত। লক্ষ্য ছিল জঙ্গি ঘাঁটিগুলো।
এরপর, ২০১৯ সালে ফের একই ঘটনা ঘটে। ভারতের পুলওয়ামায় বোমা হামলায় দেশটির ৪০ আধা–সামরিক জওয়ান নিহত হন। প্রতিক্রিয়ায় ভারত পাকিস্তানের বালাকোটে বিমান হামলা চালায়। পাকিস্তানও ভারতের একটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে এবং এক পাইলটকে বন্দী করে। পরে অবশ্য তাঁকে ফেরত দেওয়া হয়। ১৯৭১ সালের পর পাকিস্তানের অভ্যন্তরে এটি ছিল ভারতের এমন প্রথম পদক্ষেপ।এর আগেও, ২০০৮ সালে মুম্বাই হামলার মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। হোটেল, রেলস্টেশন ও একটি ইহুদি কেন্দ্র ৬০ ঘণ্টা ধরে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল সন্ত্রাসীরা। এতে প্রাণ হারায় ১৬৬ জন।
প্রতিবারই ভারত এসব হামলার জন্য পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোকে দায়ী করেছে। ইসলামাবাদ তাদের পরোক্ষভাবে সমর্থন করছ—এমন অভিযোগ এনেছে। পাকিস্তান বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
কিন্তু ২০১৬ সাল থেকে, বিশেষ করে ২০১৯ সালে পাকিস্তানের ভেতরে ভারতের বিমান হামলার পর দুই দেশের মধ্যে সংঘাত বৃদ্ধির মাত্রা নাটকীয়ভাবে পাল্টে গেছে। সীমান্ত পেরিয়ে বা আকাশপথে পাকিস্তানে ভারতের হামলা চালানো এখন যেন স্বাভাবিক ঘটনাই। জবাবে পাকিস্তানের দিক থেকেও প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এ কারণেই পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত আবারও ‘সংঘাত উসকে দেওয়া ও সংযম দেখানো’র মধ্যে দোদুল্যমান অবস্থায় রয়েছে। এটি হলো প্রতিক্রিয়া ও প্রতিরোধের এক ভঙ্গুর ভারসাম্য। এই পুনরাবৃত্ত চক্রটি যারা উপলব্ধি করেন মধ্যে অন্যতম অজয় বিসারিয়া। পুলওয়ামা হামলার সময় তিনি পাকিস্তানে ভারতের হাইকমিশনার ছিলেন। হামলার পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে তিনি তাঁর স্মৃতিকথা ‘অ্যাঙ্গার ম্যানেজমেন্ট: দ্য ট্রাবলড ডিপ্লোম্যাটিক রিলেশনশিপ বিটুইন ইন্ডিয়া অ্যান্ড পাকিস্তান’—বইয়ে লিখেছেন।
সর্বশেষ হামলার ১০ দিন পর গত বৃহস্পতিবার অজয় বিসারিয়া বিবিসিকে বলেন, ‘পুলওয়ামা বোমা হামলা ও পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডের পরবর্তী পরিস্থিতির মধ্যে আকর্ষণীয় মিল রয়েছে।’ তবে তিনি উল্লেখ করেছেন, পেহেলগাম হামলা একটি পরিবর্তন নির্দেশ করে। সেটি হলো—পুলওয়ামা ও উরি হামলা নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে হয়েছিল। এবারে হামলার লক্ষ্য বেসামরিক নাগরিক।
বিসারিয়ার মতে, এই হামলা ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে। তিনি বলেন, ‘এই হামলায় পুলওয়ামার কিছু উপাদান আছে, তবে মুম্বাইয়ের প্রভাব অনেক বেশি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আবারও সংঘাতময় পরিস্থিতিতে আছি এবং ঘটনা আগের মতোই একই রকমভাবে ঘটছে।’
এক সপ্তাহ আগে, পেহেলগাম হামলার পরপরই দ্রুত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় দিল্লি। প্রধান সীমান্তপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়, গুরুত্বপূর্ণ পানি চুক্তি স্থগিত করা হয়, কূটনীতিকদের বহিষ্কার করা হয় এবং পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য ভিসা বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাকিস্তানি নাগরিকদের দ্রুত ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে সীমান্তে দুই পক্ষের সেনারা একে অপরকে লক্ষ্য করে বিক্ষিপ্তভাবে হালকা আগ্নেয়াস্ত্রের গুলি চালিয়েছে।
দিল্লি পাকিস্তানের বাণিজ্যিক ও সামরিকসহ সব ধরনের বিমানের জন্য ভারতীয় আকাশসীমা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এর আগে ইসলামাবাদও একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারতের পদক্ষেপের পাল্টা হিসেবে পাকিস্তান ভিসা স্থগিত করেছে এবং ভারতের সঙ্গে ১৯৭২ সালের সিমলা শান্তি চুক্তি স্থগিত করেছে। বাণিজ্য সম্পর্ক স্থগিত করেছে।কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরোধ দীর্ঘদিনের। উভয় দেশ পুরো কাশ্মীর দাবি করলেও নিয়ন্ত্রণ করে আংশিক। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর থেকেই পারমাণবিক শক্তিধর এই দুই দেশের মধ্যে কাশ্মীর সংঘাতের একটি কেন্দ্রবিন্দু। অজয় বিসারিয়া তাঁর স্মৃতিকথায় ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামা হামলার পর ভারতের পদক্ষেপের কথা লিখেছেন।
হামলার পরের দিন সকালে অজয় বিসারিয়াকে দিল্লিতে তলব করা হয়। ভারত সরকার দ্রুত পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধের পদক্ষেপ নেয়। ১৯৯৬ সালে পাকিস্তানকে দেওয়া ‘মোস্ট-ফেভার্ড-নেশন’ মর্যাদা প্রত্যাহার করা হয়। পরের দিনগুলোতে মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা কমিটি পাকিস্তানি পণ্যের ওপর ২০০ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্ক আরোপ করে, যা কার্যত আমদানি বন্ধ করে দেয়। আটারি-ওয়াঘা সীমান্তে স্থলপথে বাণিজ্যও স্থগিত করা হয়।
বিসারিয়া উল্লেখ করেন, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে আরও বিস্তৃত পদক্ষেপের প্রস্তাব তোলা হয়েছিল। এর বেশির ভাগই পরে বাস্তবায়ন করা হয়। এর মধ্যে ছিল আন্তসীমান্ত চলাচলকারী সমঝোতা এক্সপ্রেস ট্রেন এবং দিল্লি ও লাহোরের মধ্যে চলাচলকারী বাস পরিষেবা স্থগিত করা; উভয় পক্ষের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে আলোচনা এবং শিখদের অন্যতম পবিত্র স্থান করতারপুর করিডর নিয়ে আলোচনা পেছানো; ভিসা বন্ধ করা; সীমান্ত পেরিয়ে যাতায়াত বন্ধ করা; ভারতীয়দের পাকিস্তানে ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা এবং দুই দেশের মধ্যে বিমান চলাচল স্থগিত করা।
সাবেক কূটনীতিক বিসারিয়া লিখেছেন, ‘পারস্পরিক আস্থা তৈরি করা কতটা কঠিন, আর তা ভাঙা কতটা সহজ! এই কঠিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে বছরের পর বছর ধরে পরিকল্পিত, আলোচিত ও বাস্তবায়িত সব আস্থা-নির্মাণ পদক্ষেপ কয়েক মিনিটের মধ্যে একটি হলুদ নোটপ্যাডে বাতিল করে দেওয়া যেতে পারে!’
২০১৯ সালে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার সময় ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনে কর্মীসংখ্যা ১১০ থেকে কমিয়ে ৫৫ করা হয়েছিল। পেহেলগাম হামলার পর এখন তা ৩০ জনে নেমেছে। সে সময় ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক আক্রমণও শুরু করে। পুলওয়ামা হামলার একদিন পর তৎকালীন পররাষ্ট্রসচিব বিজয় গোখলে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়া এবং ফ্রান্সসহ ২৫টি দেশের দূতদের এই হামলায় পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠন জয়শ-ই-মুহাম্মদের (জেএম) ভূমিকা সম্পর্কে জানান। তিনি পাকিস্তানকে ‘সন্ত্রাসবাদকে রাষ্ট্রীয় নীতি’ হিসেবে ব্যবহার করার জন্য অভিযুক্ত করেন। ভারত, জাতিসংঘ, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র জেএমকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছে। সংগঠনটি হামলার দায় স্বীকার করেছিল।
ভারতের কূটনৈতিক আক্রমণ হামলার ১০ দিন পরও অব্যাহত ছিল। হামলার পর সে বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা কমিটি যাতে জেএম প্রধান মাসুদ আজহারকে সন্ত্রাসী হিসেবে ঘোষণা করে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নও যাতে ‘সন্ত্রাসী তালিকায়’ তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করে সে জন্য ভারত তদবির করে।
পুলওয়ামা হামলার পর ভারত সরকারের ওপর সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি বাতিলের চাপ ছিল। কিন্তু ভারত সেটি না করে চুক্তির শর্ত নির্ধারিত থাকলেও পাকিস্তানকে এ বিষয়ে তথ্য দেওয়া বন্ধ করে দেয়। সে সময় মোট ৪৮টি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্থগিতের বিষয়ে পর্যালোচনা করেছিল ভারত। দিল্লিতে একটি সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হয় এবং সেখানে একটি সর্বসম্মত প্রস্তাবও গৃহীত হয়।
এদিকে, ভারত কূটনৈতিক ফ্রন্ট খোলা রাখলেও দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ বজায় ছিল। বিশেষ করে, দুই দেশের মিলিটারি অপারেশনস মহাপরিচালকদের (ডিজিএমও) হটলাইন ও উভয় দেশের হাইকমিশন নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বজায় রেখেছিল। ২০১৯ সালেও এখনকার মতোই পাকিস্তান বলেছিল, হামলাটি ‘ভুয়া’ বা ‘সাজানো’।
সে সময় এবারের মতোই ভারত কাশ্মীরে দমনপীড়ন চালায় এবং ৮০ জনের বেশি কথিত ‘ওভারগ্রাউন্ড ওয়ার্কার’কে—বা স্থানীয় যারা পাকিস্তানি জঙ্গিদের সাহায্য, আশ্রয় এবং গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে থাকতে পারে বলে দাবি করা হয়— তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তৎকালীন ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং জম্মু-কাশ্মীর সফর করেন এবং হামলা ও সন্দেহভাজন অপরাধীদের নিয়ে ডোসিয়ার (দলিল) তৈরি করা হয়।
তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে এক বৈঠকে অজয় বিসারিয়া তাঁকে জানান, এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলা মোকাবিলায় ভারতের কূটনৈতিক বিকল্প সীমিত। বিসারিয়া তাঁর বইতে লিখেছেন, ‘তিনি (সুষমা স্বরাজ) আমাকে এই ধারণা দিয়েছিলেন যে, কঠিন পদক্ষেপ আসন্ন এবং এর পরে আমরা কূটনীতির ভূমিকা প্রসারিত করতে পারব বলে আশা করা উচিত।’
এরপর, ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ভারত পাকিস্তানের বালাকোটে বিমান হামলা চালায়। এটি ছিল ১৯৭১ সালের পর আন্তর্জাতিক সীমানা পেরিয়ে ভারতের প্রথম সামরিক হামলা। ভারত দাবি করে, বালোকোটে জয়শ-ই-মুহাম্মদের একটি প্রশিক্ষণ শিবিরকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়।
হামলার ছয় ঘণ্টা পর ভারতের পররাষ্ট্রসচিব ঘোষণা করেন, এতে বিপুলসংখ্যক জঙ্গি ও কমান্ডার নিহত হয়েছে। পাকিস্তান অবশ্য দ্রুত এই দাবি অস্বীকার করে। এরপর দিল্লিতে বেশ কয়েকটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়। পরের দিন, অর্থাৎ ২৭ ফেব্রুয়ারি সংকট আরও তীব্র হয়। সেদিন সকালে পাকিস্তান পাল্টা বিমান হামলা চালায়।
এই পাল্টাপাল্টি হামলায় ভারতের একটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করা হয় এবং এর পাইলট উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান আটক হন। তাঁর আটক হওয়া নিয়ে ভারতে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। এটি পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তোলে।
অজয় বিসারিয়া লিখেছেন, এরপর ভারত একাধিক কূটনৈতিক চ্যানেল সক্রিয় করে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের দূতেরা ইসলামাবাদকে চাপ দেন। ভারতের বার্তা ছিল পরিষ্কার—পাকিস্তান পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করলে বা পাইলটের ক্ষতি করলে ভারত কঠোর পাল্টা পদক্ষেপ নেবে।
এরপর, ২০১৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান পাইলটকে মুক্তি দেওয়ার ঘোষণা দেন। যুদ্ধবন্দি প্রটোকল মেনে ১ মার্চ তাঁকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পাকিস্তান এই পদক্ষেপকে উত্তেজনা কমানোর ক্ষেত্রে এক ‘শুভেচ্ছার নিদর্শন’ হিসেবে তুলে ধরেছিল।
এরপর, ৫ মার্চের মধ্যে পুলওয়ামা, বালোকোট ও পাইলটের প্রত্যাবর্তনের পর পরিস্থিতি শান্ত হতে শুরু করে। ভারতের রাজনৈতিক উত্তেজনাও কমে আসে। নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি সিদ্ধান্ত নেয়, ইসলামাবাদে ভারতের হাইকমিশনারকে আবার পাঠানো হবে। এটি কূটনীতির দিকে ফেরার ইঙ্গিত দেয়।
অজয় বিসারিয়া লিখেছেন, ‘আমি ১০ মার্চ ইসলামাবাদে পৌঁছেছিলাম। পুলওয়ামার ঘটনার পর ২২ দিন সেখানে ছিলাম না। কারগিলের পর সবচেয়ে মারাত্মক সামরিক সংঘাত এক মাসেরও কম সময়ে শেষ হয়ে গিয়েছিল। ভারত পুরোনো কায়দার কূটনৈতিক পদক্ষেপকে অগ্রাধিকার দিতে চেয়েছিল…ভারত একটি কৌশলগত ও সামরিক উদ্দেশ্য অর্জন করেছিল। অন্যদিকে পাকিস্তান তাদের দেশের মানুষের কাছে এক ধরনের বিজয়ের দাবি করেছিল।’
বিসারিয়া এটিকে কূটনীতিক হিসেবে একটি ‘পরীক্ষার ও আকর্ষণীয় সময়’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, তবে এবারে মূল পার্থক্য ছিল লক্ষ্যবস্তু হিসেবে ভারতীয় বেসামরিক নাগরিক। আরও বড় বিষয় হলো, হামলা এমন সময় হয়, যখন কাশ্মীরের পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে উন্নত হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছিল।
বিসারিয়া মনে করেন, উত্তেজনা বৃদ্ধি অনিবার্য, তবে এর পাশাপাশি ‘উত্তেজনা প্রশমনের প্রবণতাও’ থাকে। এমন সংঘাতের সময় যখন নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি বৈঠক করে, তখন তারা সংঘাতের অর্থনৈতিক প্রভাব বিবেচনা করে। তারা এমন পদক্ষেপ খোঁজে যা পাকিস্তানকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, কিন্তু ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা আঘাত আসবে না।
বিসারিয়া বলেন, ‘এবারও (ভারতের) শরীরী ভাষা ও পরিস্থিতি একই রকম।’ তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে তিনি ভারতের সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি বাতিলের হুমকি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘ভারত যদি এটি কার্যকর করে, তাহলে পাকিস্তানের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ও গুরুতর পরিণতি হবে।’ তিনি বলেন, ‘মনে রাখবেন, আমরা তখনো একটি সংকটের মধ্যেই ছিলাম। আমরা তখনো কোনো সামরিক পদক্ষেপ (কাইনেটিক অ্যাকশন) দেখিনি।’