চট্টগ্রামে দু’উড়াল সড়কের বেহাল অবস্থা কনক্রিট উঠে গিয়ে বড় বড় গর্ত

মো.মুক্তার হোসেন বাবু : চট্টগ্রাম মহানগরীতে দু’টি উড়াল সড়কের অবস্থা বেহাল হয়ে উঠেছে। উড়াল সড়ক দু’টির কনক্রিট উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় গর্তের। গতকাল বুধবার কদমতলী ফ্লাইওভার ও দেওয়ানহাট ওভারপাসের এই বেহাল দশা পরিলক্ষিত হয়েছে। দীর্ঘদিন থেকে এসব গর্তের সৃষ্টি হলেও গর্ত ভরাটের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছেনা বলে নিয়মিত চলাচলরত যাত্রীরা জানালেন। ফলে দিনে দিনে গর্তের সংখ্যা ও আকার বাড়ছেই। এতে ফ্লাইওভার দুটির ব্যবহারকারীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এক গাড়ি চালক জানান, আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের অবস্থা খারাপ হওয়ার পর থেকেই এই (দেওয়ানহাট ফ্লাইওভার) ফ্লাইওভার দিয়ে গাড়ি চলাচল বেড়ে গেছে। অন্যান্য গাড়ির তুলনায় ট্রাকের চলাচল ফ্লাইওভারটি দিয়ে বেশি। ফ্লাইওভারে অনেকগুলো গর্ত হয়েছে। গাড়ি চালাতেই এখন ভয় লাগে। দ্রæত সংস্কার কাজ না করলে এখানে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা আছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেওয়ানহাট ওভারপাস ও কদমতলী ফ্লাইওভার নির্মাণ করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এরমধ্যে ২০১৩ সালে দেওয়ানহাট ওভারপাস ও ২০১৫ সালে কদমতলী ফ্লাইওভার সর্বসাধারণের জন্য উম্মুক্ত করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী কোনো সংস্থার অধীনে সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণের পর তা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) কাছে রক্ষণাবেক্ষনের জন্য হস্তান্তর করার কথা। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোন ফ্লাইওভারই চসিকের কাছে হস্তান্তর করেনি সিডিএ। ফলে ফ্লাইওভারগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও থেকে যায় সিডিএর হাতে। প্রায় পাঁচবছর আগে ফ্লাইভারগুলো উদ্বোধন করা হলেও নিয়মিত সংস্কার কাজ করা হয়নি। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ কাজ না করার কারণে ফ্লাইওভার দুটিতে কার্পেটিং উঠে গিয়ে অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গত বর্ষার সময়ও ফ্লাইওভার দুটিতে অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়। তখন সাময়িকভাবে সিডিএ সংস্কার কাজ করলেও অল্প দিনেই তা আবার উঠে যায়। বর্তমানে ফ্লাইওভার দুটিতে ছোট-বড় অনেক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে যানবাহনের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। কিন্তু এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই সিডিএ’র।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান ফ্লাইওভারে গর্ত সৃষ্টি হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, দেওয়ানহাট ওভারপাস উদ্বোধন করার পর ৫ বছর হয়ে গেছে। দীর্ঘ সময় যানবাহন চলাচলের কারণে কার্পেটিং উঠে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। আমরা সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি, কিন্তু বৃষ্টির কারণে কাজ করা যাচ্ছে না। বৃষ্টি না থাকলে আমরা সংস্কার কাজ শেষ করবো। আশা করছি, এক সপ্তাহের মধ্যে আমরা সংস্কার কাজ করতে পারবো।
জানা গেছে, দেওয়ানহাট ওভারপাসের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১১সালে। ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ওই প্রকল্পের কাজ শেষ হয় ২০১২ সালে। তবে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয় ২০১৩ সালে। কদমতলী ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১০ সালে। ৫৮ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই প্রকল্পের কাজ শেষ হয় ২০১৫ সালে। একই বছরই ফ্লাইওভারটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ফ্লাইওভার দুটির উপরের কাপেটিং উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোটবড় অসংখ্য গর্ত। কার্পেটিং কাজে ক্রুটির কারণে কোথায় কোথাও জমে থাকে বৃষ্টির পানি। পরবর্তীতে ভারী যানবাহনের নিয়মিত চলাচলে তা উঠে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও কার্পেটিং উঠে পাথরগুলো স্তুপ হয়ে আছে ফ্লাইওভারের এক পাশে। ফ্লাইওভার দুটিতে উঠার মুখেই আছে বড় বড় গর্ত। এতে যানবাহন চলাচলের স্বাভাবিকতা ব্যাহত হচ্ছে। একদিকে উড়াল সড়কের বেহাল অবস্থা অন্যদিকে ট্রাকসহ অতিরিক্ত গাড়ির চাপ আছে এ দুই উড়াল সড়কে। ফলে নিত্য যানজটও লেগে থাকছে সেখানে। ফ্লাইওভারের গর্তে আটকে গাড়ি নষ্ট হচ্ছে নিয়মিত।

সর্বশেষ