আইনজীবীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা: খালেদা জিয়ার মামলা পরিচালনা ব্যাহত

 

- Advertisement -

কারাগারে থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মামলা পরিচালনায় তার আইনজীবীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা লক্ষ্য করা গেছে। যদিও তিনি কারাগারের বাহিরে থাকতে তেমনটি লক্ষ্য করা যায়নি। আর এজন্য মামলা পরিচালনাও কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানা গেছে।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় রায় ঘোষণার জন্য আগামী ২৯ অক্টোবর দিন ধার্য করেছেন পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে চলা বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড.আখতারুজ্জামান। গত ১৬ অক্টোবর মামলার শুনানি শেষে আদালত এ দিন ধার্য করে দেন।

এর আগে খালেদা জিয়া অনুপস্থিতিতে ওই মামলার বিচার চলার আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করেছিলেন তার আইনজীবীরা। যা গত ১৪ অক্টোবর খারিজ হয়। এর পর ওই রিভিশন আবেদন খারিজের বিরুদ্ধে ১৫ অক্টোবর আপিল করা হয়। যা আগামীকাল রোববার চেম্বার বিচারপতির আদালতে শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।

তবে দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, তিনি আপিল দায়েরের বিষয়টি শুনেছেন। কিন্তু হাতে কোন কাগজ পাননি।

এদিকে ১৫ অক্টোবর কায়সার কামাল আপিল দায়ের করলেও বিষয়টি জানেন না বলে জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার অপর আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া। জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি কায়সার কামালের জানার কথা।

প্রসঙ্গত, বকশি বাজারের আলিয়া মাদ্রাসা থেকে পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে আদালত স্থানান্তরের পর সানাউল্লাহ মিয়া ও মাসুদ আহমেদ তালুকদারই কেবল খালেদা জিয়ার আইনজীবী হিসেবে সেখানে মামলা পরিচালনায় অংশ গ্রহণ করেছেন। আর চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় রায়ের দিন ধার্যের সময়ও তারাই আদালত উপস্থিত ছিলেন।

নিয়ম অনুযায়ী উচ্চ আদালতে কোন আবেদন বিচারাধীন থাকাবস্থায় নিম্ন আদালত সে বিষয়ে আদেশ দিতে পারেন না। তবে এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কায়সার কামাল বলেন, আইন থাকলে পারেনা। এখনকি দেশে আইন আছে?

তবে গণমাধ্যমকে আপিল দায়েরের বিষযটি আগে জানানো হয়নি কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে কায়সার কামাল বলেন, সেটা আমার দায়িত্ব না। যারা জানায় তারা মিডিয়াতে নাম প্রচারের জন্য করে। তবে অন্য আইনজীবীদেরও বিষয়টি না জানানো সমন্বয় হীনতা কিনা জানতে চাইলে, তিনি বলেন, এটা কোন ভাবেই সমন্বয়হীনতা নয়। আমরা প্রত্যেকে যে যার কাজ করে যাচ্ছি।

এদিকে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, কোর্টতো জানতো না, আমরা আপিল দায়ের করেছি। আর মামলার আসামি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন। এ অবস্থায় রায় ঘোষণা করা যেতে পারে না। আপিল হয়েছে, সেখানে কি হয় দেখা যাক। প্রয়োজনে আবারো রায়ের তারিখ পরিবর্তন হতে পারে বলেও জানান তিনি। তবে নিজেদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব এমনটি মানতে নারাজ তিনি।

এর আগে কুমিল্লার হত্যা মামলায় হাইকোর্টে খালেদা জিয়ার জামিনের জন্য শুনানি শেষ করেছিলেন খন্দকার মাহবুব হোসেন। শুনানি শেষ হবার পর বিষয়টি আদেশের জন্য ছিল। তবে আদেশের আগ মুহুর্তে অপর আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী কুমিল্লার আদালতে যাবার কথা জানিয়ে ৬ আগস্ট বিষয়টি নট প্রেস রিজেক্ট করতে আবেদন করেন। পরে হাইকোর্ট বিষয়টি নট প্রেস রিজেক্ট করেন। এরপর কুমিল্লার আদালতে আবেদন করলেও জামিন মেলেনি এখনো।

এদিকে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় অনেক আইনজীবী ক্ষোভ প্রকাশ করেন মাঝে মধ্যেই। বিশেষ করে অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার বিষযটি নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার প্রতিশ্রুতি দীর্ঘ দিনেও বাস্তবায়ন হয়নি। এছাড়া ঘরে বসে কেবল বক্তব্য- বিবৃতি দিলে হবে না। রাজ পথে নামতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে একটি অংশটি মূল ধারার বাইরে নানা কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। তারা ‘গণতন্ত্র ও খালেদা জিয়া মুক্তি আইনজীবী আন্দোলন’ এর ব্যানারে পৃথকভাবে কর্মসূচি পাল করছে। এর অগ্রভাগে রয়েছেন তৈমুর আলম খন্দকার ও আবেদ রাজা।

এছাড়া দলের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সিদ্ধান্তও সবাইকে সঠিক সময়ে সবাইকে জানানো হয়না বলে অভিযোগ বিএনপির অনেক আইনজীবীর। তাদের মতে দলের নেতৃস্থানীয়রা সঠিকভাবে মূল্যায়ন না করার কারনে তরুন আইনজীবীরা এখন আর স্বতস্ফুতভাবে কর্মসূচিতে অংশ নেয়না। তাই সব ভুলে সবাইকে নিয়ে মাঠে নামতে হবে বলেও মনে করেন বঞ্চিতরা।

সর্বশেষ