কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক সমস্যা আরো বেড়ছে এবং তাকে অবর্ণনীয় কষ্টে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিএনপি। বর্তমানে তিনি চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন। তাকে অবিলম্বে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেয়ার দাবি দলটির। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী শুক্রবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রতিহিংসায় কান্ডজ্ঞানহীন সরকার দেশনেত্রীকে নির্যাতন করাটাই ছিল যেন মূল টার্গেট। বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে আমরা বারবার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করলেও সরকার ও কারাকর্তৃপক্ষ কোনো কর্ণপাত করছে না।
‘হায়াত-মউত আল্লাহ’র হাতে, এখানে কারো হাত নেই’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্য ভয়ঙ্কর ইঙ্গিত বহন করে। তার ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্যে আমরা দেশনেত্রীর জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে আরো বেশি উদ্বেগ ও শঙ্কা প্রকাশ করছি। ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে প্রমাণিত হলো যে, সত্যি সত্যি তারা বিএনপি চেয়ারপারসনের জীবন নিয়ে একটা গভীর চক্রান্তে লিপ্ত।
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, মো: মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রিজভী বলেন, বৃহস্পতিবার শারীরিকভাবে অসুস্থ দেশনেত্রীর সাথে দেখা করার জন্য দলের মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পত্র নিয়ে কারাফটকে গেলেও তার সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি দেয়নি কারাকর্তৃপক্ষ। বেগম খালেদা জিয়ার হাঁটু ও পায়ের ব্যথা আরো বেড়ে গেছে। পুরাতন ভবনের স্যাঁতস্যাঁতে কক্ষে তাকে অন্তহীন নানাবিধ সমস্যার দ্বারা আক্রান্ত হতে হচ্ছে। সেখানে একদিকে মশার তীব্র উপদ্রব, অন্যদিকে ঘনঘন লোডশেডিংয়ে তাকে এক অবর্ণনীয় কষ্টে রাখা হয়েছে। আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে সাজা দিয়ে দেশনেত্রীকে বন্দী করে রেখেছে।
তিনি বলেন, আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই-অবিলম্বে দেশনেত্রীর ইচ্ছানুযায়ী রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের দিয়ে চিকিৎসা ব্যবস্থা করা হোক, অন্যথায় জনগণের রুদ্ররোষ থেকে কেউই রেহাই পাবেনা। দেশনেত্রীর চিকিৎসা নিয়ে কারাকর্তৃপক্ষের গড়িমসি সহ্য করা হবে না। আমি আবারো অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তি দাবি করে তাকে তার পছন্দানুযায়ী চিকিৎসা সেবা পাওয়ার সুযোগ প্রদানের জন্য জোর আহবান জানাচ্ছি।
রিজভী বলেন, লন্ডনে সরকার প্রধানদের ২৫তম কমনওয়েলথ সম্মেলনে এক্সিকিউটিভ সেশনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- ‘টেকসই শান্তি এবং স্থিতিশীলতার ভিত্তি হচ্ছে গণতন্ত্রের উন্নয়ন, সুশাসন ও আইনের শাসন’। কিন্তু তার এই বক্তব্যে কমনওয়েলথে যোগ দেয়া বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানরা নিশ্চয়ই বিস্ময়ে হতবাক হয়েছেন। কারণ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে স্বৈরাচারের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছেন। তার নেতৃত্বেই বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে।
বর্তমানে দেশে গণতন্ত্রের বিকাশ তো দূরে থাক, ন্যুনতম গণতন্ত্র, সুশাসন ও আইনের শাসন সম্পূর্ণরুপে উধাও হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর এহেন বক্তব্য যেন বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের প্রতি চরম উপহাস ও মশকরা করা।
তিনি বলেন, দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্রীদেরকে গভীর রাতে হল থেকে সম্পূর্ণ অমানবিক আচরণের মাধ্যমে বের করে দেয়া হয়। যা দেশের ইতিহাসে একটি অন্যতম ন্যাক্কারজনক ও কলঙ্কজনক ঘটনা। ছাত্রীদের প্রতি ছাত্রলীগের নির্যাতনকে জারি রাখার ছাড়পত্র দিয়েছে বর্তমান সরকার। আওয়ামী সমর্থিত ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যে এতো নীচে নামতে পারে, সেটি দেখে বিবেকবান মানুষেরা আজ বিস্মিত, হতভম্ব। আওয়ামী সমর্থিত শিক্ষক ও ছাত্রলীগ যেন একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রনি এক কোচিং সেন্টার মালিককে চাঁদার দাবিতে যে অমানবিক নির্যাতন করারও সমালোচনা করেন রিজভী।
তিনি বলেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বরগুনার বেতাগী থানা ও পৌর বিএনপি কার্যালয় উদ্বোধন করে মিলাদ অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার একপর্যায়ে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এতে পাঁচ জন বিএনপি নেতাকর্মী আহত হন। খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তির দাবিতে এবং কুমিল্লার আদালতে তাকে জামিন না দেয়ার প্রতিবাদে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল চলাকালে নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতারের ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
এছাড়া ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম জিকোকে গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং বগুড়া জেলা যুবদল সভাপতি সিপার আল বখতিয়ারের ওপর রাস্তায় আওয়ামী সন্ত্রাসী কর্তৃক ককটেল হামলায় ঘটনায় নিন্দা-প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন রিজভী।