বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য কারাগারে ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহা সচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার (২১ এপ্রিল) নয়াপল্টনে বিএনপির স্থায়ী কেন্দ্রীয় কায়ালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
ফখরুল বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) বেশ কিছু ব্যাধিতে আক্রান্ত, এর মধ্যে এক্যুইট রিউমেটিক আর্থারাইটিস তাঁকে বেশ কষ্ট দিচ্ছে। অবিলম্বে তাঁর পছন্দনীয় হাসপাতাল ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য সুপারিশ করেছেন। বিশেষ করে কয়েকটি রক্ত পরীক্ষা এবং এম আর আই পরীক্ষা তাঁর জন্য অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, সরকার কর্তৃক গঠনকৃত একটি মেডিকেল টিম তাঁকে পরীক্ষা করতে গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে প্রফেসর মালিহার রশীদের নেতৃত্বে দুই সদস্যের একটি মেডিকেল টিম তাঁকে দেখতে যান। সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে, অথচ এ ব্যাপারে কারা কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত স্পষ্টভাবে কোন বক্তব্য আমাদের দেননি বা জাতির সামনে তুলে ধরেননি।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এই দেশের গণমানুষের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী। মিথ্যা সাজানো মামলায় তাঁকে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে তাঁকে এবং তাঁর দলকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া। গণবিচ্ছিন্ন ও রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে যাওয়া সরকারের ২০১৪ এর মতো একতরফা নির্বাচনের প্রহসনের মধ্য দিয়ে আবারও ক্ষমতা দখলই হচ্ছে তাদের মূল উদ্দেশ্য।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের দিয়ে তাঁর চিকিৎসা না করানো, দলের নেতৃবৃন্দ ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা না করতে দেওয়া অত্যন্ত হীনউদ্দেশ্যমূলক। সরকারের মন্ত্রীদের এ বিষয়ে মন্তব্য এবং কটূক্তি সকল শিষ্টাচার বহির্ভূত এবং চক্রান্তের বহিঃপ্রকাশ। তাদের দলের সাধারণ সম্পাদক এবং অন্যান্য মন্ত্রীবৃন্দ যখন বলেন ‘হায়াত-মওত আল্লাহর হাতে’ ‘বিএনপি দেশনেত্রীর স্বাস্থ্য বিষয়ে রাজনীতি করছে’ তখন এটা স্পষ্ট তারা দেশনেত্রীর স্বাস্থ্য বিষয়ে ধূব্রজাল সৃষ্টি করে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চায়। বেগম জিয়াকে রাজনীতি থেকে এবং আসন্ন নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চায়। এতো ভয় কেন ? দেশনেত্রীকে মাঠে নামতে দিন-বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে দিন, যথেচ্ছ পুলিশ ব্যবহার বন্ধ করুন-দেখুন আপনারা কোথায় দাঁড়াতে পারেন। রাজনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সাহস আপনাদের নেই।আপনারা জনগণ থেকে একারণেই বিচ্ছিন্ন। তাই এই বল প্রয়োগ করে দেশনেত্রীকে কারাগারে আটকে রেখে ২০১৪ এর মতো একতরফা নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চান এবং ক্ষমতা দখল করে রাখতে চান। বাংলাদেশের সচেতন গনতন্ত্রকামী মানুষ আপনাদের সে সুযোগ দেবেনা। এখনও সময় আছে অবিলম্বে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিয়ে তাঁকে তাঁর পছন্দনীয় চিকিৎসক দ্বারা এবং হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন এবং সারাদেশে গনতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করুন। অন্যথায় দেশনেত্রীর স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটলে তার দায়-দায়িত্ব পুরোটাই সরকারকে বহন করতে হবে। এ বিষয়ে নোংরা রাজনীতি না করে সোজা পথে তাঁকে মুক্তি দিয়ে সু-চিকিৎসার ব্যবস্থা করার আহ্বান জানাচ্ছি।
এর আগে গতকাল ২০ এপ্রিল তারিখে তাঁর পরিবারের সদস্যবৃন্দ পূর্ব সিদ্ধান্তে সাক্ষাৎ করতে পারেননি। তার আগে ১৮ এপ্রিল তারিখে আমিসহ আমাদের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য জনাব মির্জা আব্বাস ও জনাব নজরুল ইসলাম খানকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে, অথচ সুস্পষ্টভাবে কোন কারণ দেখানো হয়নি। জেলার ভেতর থেকে টেলিফোনের মাধ্যমে জনাব মির্জা আব্বাসকে জানান যে, আজ সম্ভব হচ্ছে না। অর্থাৎ প্রায় ১০ দিন যাবৎ পরিবারের সদস্যবৃন্দ এবং দল দেশনেত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পায়নি। এতে করে উদ্বেগ আরও বেড়েছে।