ষড়যন্ত্র করে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রার্থীতা আটকে দেয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) কঠোর পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে বিএনপি। দলটি বলছে- তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে নানা কূট কৌশল ও ফন্দি ফিকির অব্যাহত রেখেছে সরকার। নিন্মে আদালতকে ব্যবহার করে মিথ্যা সাজানো মামলায় সাজা দিয়ে বন্দি করে রেখেই ক্ষান্ত হয়নি সরকার, এখন উচ্চ আদালতকে ব্যবহার করছে। গতকাল হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ থেকে অবজারভেশন দেয়া হলো, উচ্চ আদালতের আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় নি¤œ আদালতের দেয়া সাজা স্থগিতের কোনো বিধান নেই।
আদেশের পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা ঘোষণা দিলেন-যারা দন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। মূলত: বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে দুরে রাখতেই তড়িঘড়ি করে সরকারের মেকানিজমে এরকম একটি আদেশ দেয়া হলো। মঙ্গলবার বিকেলে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম, মীর সরফত আলী সপু সহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, অতীতে আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় নির্বাচন করার নজির রয়েছে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ, আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন খান আলমগীর দন্ডিত হয়েও সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। এছাড়া দন্ডিত হয়ে বর্তমান ভোটারবিহীন সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী বীরদর্পে মন্ত্রীত্ব করে যাচ্ছেন। সুতরাং বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাচন হতে দূরে রাখার সকল কূটকৌশল থেকে সরে না আসলে এর ফল শুভ হবে না।
দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আপিল চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি না হওয়ায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। বিচারিক আদালতে দন্ডিত হওয়ার পরও সংসদ সদস্য পদ আপিল করে বহাল থাকার দৃষ্টান্ত এদেশে আছে। ষড়যন্ত্র করে বেগম জিয়ার প্রার্থীতা আটকে দেয়ার কঠোর পরিণতি নির্বাচন কমিশনকে ভোগ করতে হবে।
রিজভী বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকারবিরোধী প্রচারণা যাতে না ঘটতে পারে, সেজন্য সরকারের নির্দেশে একের পর এক বিধিনিষেধ আরোপ করছে নির্বাচন কমিশন। পর্যবেক্ষকদের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকতে বলা হয়েছে, গণমাধ্যমকে কেন্দ্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে, কেন্দ্র থেকে যেকোনো অনিয়ম-সংঘর্ষ-ভোট ডাকাতির মতো সন্ত্রাসী কর্মকান্ড সরাসরি সম্প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়েছে, এখন সোশ্যাল মিডিয়াকে ২৪ ঘন্টা মনিটরিংয়ের নামে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। মূলত: সরকারের সকল অপকর্ম ঢাকতেই নির্বাচন কমিশনের একের পর এক এই কঠোর নীতিমালা। এইসব নীতিমালা নি:সন্দেহে একতরফা নির্বাচন আয়োজনেরই চূড়ান্ত পদক্ষেপ বলে জনগণ মনে করে।
তিনি বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সরকার সারাদেশে রিটার্নিং অফিসারদেরকে টয়োটা এলিয়েন গাড়ি গিফট করেছে, যে গাড়ির মূল্য ৩৫ লক্ষ টাকা। এটা নির্বাচনকে সরকারের অনুকূলে প্রভাবিত করার জন্য রিটার্নিং অফিসারদেরকে উৎকোচ দেয়া। আমরা এধরনের ঘৃণ্য কর্মের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতার প্রসঙ্গে রুহুল কবির রিজভী বলেন, গত সোমবার দুপুরে পাবনা জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঈশ্বরদি পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টুকে ঢাকা থেকে র্যাব গ্রেফতার করেছে। কিন্তু র্যাব জাকারিয়া পিন্টুরে গ্রেফতারের কথা অস্বীকার করছে। এটি বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে ভয় দেখানোর জন্য সরকারের আরেকটি মনুষ্যত্বহীন আচরণ। এই গুমের ঘটনার মধ্য দিয়ে দেশের ভোটারদের একটি বার্তা দেয়া হলো-যারা বিএনপির পক্ষে কাজ করবে তাদের পরিণতিও হবে জাকারিয়া পিন্টুর মতো। সরকার আসন্ন নির্বাচনকে সন্ত্রাসী পরিকাঠামোর মধ্যে আটকিয়ে রেখে একতরফা নির্বাচন নিশ্চিত করার সকল বন্দোবস্ত করে যাচ্ছে। গুম-গুপ্তহত্যা, মামলা, গ্রেফতার ও রিমান্ডে নির্যাতনের পরিবেশ বজায় রেখে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চাচ্ছে, যাতে বিরোধী দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও ভোটাররা ভোটকেন্দ্রের আশপাশে আসতেও সাহস না করে। আমি অবিলম্বে জাকারিয়া পিন্টুকে সুস্থাবস্থায় জনসমক্ষে হাজির করে পরিবারের নিকট ফিরিয়ে দেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।
তিনি জানান, ভোলার চরফ্যাশনে আয়শাবাদ গ্রামে সোমবার সকালে বিএনপির নির্বাচনী প্রস্তুতি সভায় আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে বিএনপির ১০ জন নেতাকর্মীকে আহত করেছে। ৩টি মোটরসাইকেলও পুড়িয়ে দেয়। সাবেক এমপি ও ভোলা-৪ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী নাজিম উদ্দিন আলমের সেই সভায় হঠাৎ করে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। ফেনীর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের হাসান মাহমুদ সবুজ কারাগার থেকে মুক্তিলাভের পর পুনরায় তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে কারাফটক থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণে ছাত্রদল নেতা তাজুল ইসলামসহ তিন জন ছাত্রদল নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
নিউমার্কেট থানার আবু তাহের, শাহ আলম মন্টু, আবু তাহের দাইয়া, ইমরান ও মো: হানিফকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। হাজারীবাগ থানা যুবদলের মো: মুরাদ হোসেন, মো: জেবু, মো: আনিস এবং মো: ফিরোজকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গাজীপুর ছাত্রদল সভাপতি জাহাঙ্গীর আলমকে ভাটারা থানা পুলিশ, বনানী থানা বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান বাচ্চুকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ও শরীয়তপুর-২ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী মোঃ শফিকুর রহমান কিরণ গত সোমবার মিথ্যা মামলায় আদালতে হাজিরা শেষে ফেরার পথে তার সঙ্গে থাকা ২০/২৫ জন নেতাকর্মীর ওপর আওয়ামী সন্ত্রাসীরা অতর্কিতে হামলা চালায়।
হামলায় শফিকুর রহমান কিরণসহ কয়েকজন নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়। আমি নেতাকর্মীদের ওপর এই সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি একইসাথে বিএনপির নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং মুক্তি দাবি করছি।