আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মনোনয়নপত্রের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপি বলছে, একদিকে টার্গেট করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ দলের ৫০ জন হেভিওয়েট জনপ্রিয় নেতা ও সাবেক এমপির মনোনয়নপত্র বিনা অজুহাতেই বাতিল করা হয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর একজনেরও মনোনয়পত্র বাতিল হয়নি! কারণ তাদেরকে সাধু সন্যাসী বলে মনে করে ইসি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এ থেকে স্পষ্ট যে- শেখ হাসিনার নির্দেশের বাইরে ইসি একধাপ এগুতে পারবে না। যা কিছু হচ্ছে তা হচ্ছে- পুতুল নাচ। ইসি এখন যে নাচটি নাচছে তার সুতাটা ধরে আছে গণভবন না হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। ওখান থেকে সুতাটা যেভাবে টান দিচ্ছে, ইসি পুতুল নাচের মতো সেভাবে নাচছে। সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম উত্তর, নরসিংদী, বাগেরহাটসহ সারাদেশের বিভিন্ন জেলায় গতকাল নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের তালিকা তুলে ধরে তাদের মুক্তির দাবি জানান রিজভী।
তিনি বলেন, সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রধানমন্ত্রীর প্রচ্ছন্ন নির্দেশেই ইসি সকল কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ইসির কর্মকাণ্ডেই বোঝা যায় যে, তারা কোন জাতের? গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচনের নেতিবাচক চরিত্র হলেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। তিনি নির্বাচনকে নিয়ে যত রকমের কারিগরি করা দরকার তাই করছেন। আমরা বিশ্বস্ত সূত্রে জেনেছি যে, ভোটের দিন ইন্টারনেট থ্রি-জি, ফোর-জি মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয়া হবে। মনিটরিং করা হচ্ছে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। সরকারের সমালোচনা করলেই মামলার হুমকি দিয়েছে ইসি সচিব। তবুও এদেশের জনগণ ও জাতীয়তাবাদী শক্তি ‘শিকল ভাঙ্গা পণ’ নিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করার নির্বাচনী প্রতিযোগিতার যুদ্ধে এগিয়ে যাবে।
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপকা সাহিদা রফিক, কেন্দ্রীয় নেতা এবিএম মোশাররফ হোসেন, আবদুস সালাম আজাদ, খন্দকার মাশুকুর রহমান, শাহজাহান সম্রাট প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী বলেন, রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বে বগুড়ার ডিসি কর্তৃক মনোনয়নপত্র বাতিল করার মাধ্যমে বেগম জিয়া আরো একটি আক্রোশের শিকার হলেন। রিটার্নিং অফিসারদের কক্ষ সংলগ্ন ‘ছোট রুম’টিই এখন টক অব দি কান্ট্রি। বিএনপি প্রার্থীদের মনোনয়ন পত্র বাতিল করা হবে কি হবে না সেটি জানার জন্য বারবার রিটার্নিং অফিসার ওই ছোট রুমে ছুটে যান। মূলত: সরকারের নির্দেশ শোনার জন্যই রিটার্নিং অফিসারকে বারবার ওই রুমে যেতে হয়। বিএনপির প্রার্থীদের অনেকেরই মনোনয়নপত্র নির্ভুল থাকার পরও উক্ত ছোট রুম থেকে ফিরে এসে রিটার্নিং অফিসার (ডিসি) বলেন, উপরের নির্দেশ আছে বলেই এই মনোনয়নপত্রটি বাতিল করতে আমি বাধ্য হচ্ছি!
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মনোনয়ন পত্রে স্বাক্ষর না করা সত্ত্বেও তার মনোনয়নপত্র বৈধ করা হয়েছে। বলা হয়েছে- তার মনোনয়ন পত্রে টিপসই দেয়া হয়েছে, তিনি গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় অচেতন হয়ে থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন। কেউ বিদেশে অবস্থান করলে তার স্বাক্ষর কিংবা টিপসই সংশ্লিষ্ট দেশে বাংলাদেশ এ্যাম্বেসির একজন ফার্স্ট সেক্রেটারী কর্তৃক সত্যায়িত করতে হবে। এধরনের কর্মকর্তার দ্বারা সত্যায়িত হয়নি সৈয়দ আশরাফের মনোনয়নপত্র।
তার মনোনয়নপত্র নোটারি করা হয়েছে বাংলাদেশে, যা আইনসিদ্ধ নয়। তার নামে কোনো ব্যাংক একাউন্ট নেই, যেখান থেকে নির্বাচনী খরচ চালানো হবে। তাহলে সৈয়দ আশরাফের মনোনয়নপত্র বৈধ হলো কিভাবে? আসলে শেখ হাসিনার ইচ্ছার প্রতি ইসির ভালোবাসা, প্রশ্রয়, সমর্থন প্রতিদিনই গভীর হচ্ছে। শেখ হাসিনা জনগণকে মনে করেন অনুকম্পার বস্তু। একটাও আওয়ামী লীগের কারো মনোনয়নপত্র বাতিল হলো না। আর বেগম খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নেতারা বাদ পড়ে গেলেন। উনাদের দণ্ডপ্রাপ্ত যারা সবাই টিকে গেলেন!
রিজভী বলেন, স্বাক্ষর করেননি, তথ্য দেননি, বেসামরিক বিমান পর্যটন মন্ত্রী একেএম শাহজাহান কামাল কাগজপত্র ও অন্যান্য তথ্য দাখিল না বলেও তারটা টিকে গেলো! বিষয়টি নিউজ করতে গেলে তিনি সাংবাদিকদেরকে হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন। এখানেই বুঝতে পারেন যে, কার পরামর্শে ইসি চলছে? নির্বাচন কমিশন কে? ওই যে একটা ছবি হয়েছিলো না- ‘সখী তুমি কার?’ নির্বাচন কমিশন তুমি কার? শেখ হাসিনার। এ ব্যাপারে আর কোনো দ্বিধা নেই। তারা প্লেয়িং ফিল্ড সমতল করা থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছেন। নির্বাচনী লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এখন বরেন্দ্র ভূমির ন্যায়। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে গণতন্ত্রকে হত্যার পর এবারের নির্বাচনের মাধ্যমে সেই লাশটির ময়নাতদন্তের রিপোর্টও গায়েব করে দিতে উদ্যোগী হয়েছে নির্বাচন কমিশন। আওয়ামী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপির গন্ধ পেলেই হামলে পড়ছে।