চট্টগ্রামে ধর্ষণে জড়াচ্ছে প্রাইভেটকার চালকদের একটি চক্র

মো.মুক্তার হোসেন বাবু : চট্টগ্রাম মহানগরীতে প্রাইভেটকার চালকরা একের পর এক অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। প্রাইভেটকার চালকদের সংঘবদ্ধ একটি চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এই চক্র থেকে বাঁচতে পরিবার ও তরুণীদের সতর্ক থাকার আহবান জানিয়েছে পুলিশ। পাশাপাশি ড্রাইভার নিয়োগে তথ্য যাচাইয়ে পুলিশি সহযোগিতার কথা বললেন কোতোয়ালী থানার ওসি মো. মোহসিন।
জানা গেছে, গত ২৭ জানুয়ারি সকালে এক ছাত্রী বাসা থেকে বের হয়ে মাদ্রাসা যাওয়ার পথে নগরীর জামাল খান মোড় এলাকায় পৌঁছলে একটি প্রাইভেটকার তার সামনে এসে দাঁড়ায়। এসময় কারের ভিতরে থাকা এক ব্যাক্তি রিমা কমিউনিটি সেন্টার কোন দিকে জানতে চেয়ে ছাত্রীটির কাছে সাহায্য চেয়ে তাকে প্রাইভেট কারে তুলে নেয়। গাড়িতে তুলে তারা শিক্ষার্থীকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে চুপ থাকতে বলে। এসময় পিছনের সিটে আরোহী হিসাবে বসা সাহাবুদ্দীন তাকে ধর্ষণ করে। আর ড্রাইভার হিসাবে থাকা শ্যামল দে তার মোবাইলে ধর্ষণের চিত্রটি ধারণ করে। এভাবে দুইজন পালাক্রমে তাকে ধর্ষণ করে গণি বেকারি মোড়ে নামিয়ে দেয়। এসময় শিক্ষার্থীর মোবাইল নাম্বারটি নিয়ে এ ঘটনা কাউকে প্রকাশ না করার হুমকি দেয় তারা। শিক্ষার্থী ভয়ে কাউকে বিষয়টি না জানিয়ে বাসায় চলে যায়। কিন্তু পরের দিন গত সোমবার (২৮ জানুয়ারি) ধর্ষক শাহাবুদ্দীন ভিকটিমের মুঠোফোনে কল দিয়ে তার সাথে দেখা করার জন্য চাপ দেয়। কোন উপায়ান্ত না দেখে ধর্ষণের শিকার শিক্ষার্থী তার ভাইকে ঘটনাটি খুলে বলে। পরে ভিকটিম তার ভাইকে নিয়ে বিকেলে কোতোয়ালী থানায় যায়।
পুলিশের সাথে কথা বলার সময় ধর্ষক শাহাবুদ্দীন পুনরায় কল দিয়ে দিদার মার্কেট আসার জন্য চাপ দিলে পুলিশ কৌশলে ভিকটিমকে শাহাবুদ্দীনের কথা মতো দিদার মার্কেট নিয়ে যায়। এসময় শাহাবুদ্দীন ও শ্যামলসহ তাদের এক সহযোগি ভিকটিমকে দ্রুত গাড়িতে তুলে চকবাজারের দিকে চলে যায়।
গাড়িটি চকবাজার প্যারেড কর্ণার ও জামাল খান হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করতে থাকে। গাড়িটির সামনে থাকা টহল পুলিশ ও পিছনে থাকা কোতোয়ালী থানা পুলিশ তাদের দাঁড়ানোর জন্য ব্যারিকেড দিলে তারা গাড়ি না থামিয়ে দ্রুতগতিতে চলতে থাকে। এক পর্যায়ে লালদীঘি জেলা পরিষদ মার্কেটের সামনে প্রাইভেটকারটি থামিয়ে তারা জহুর হকার্স মার্কেটে প্রবেশ করে সাধারণ মানুষের সাথে মিশে যায়। এসময় পুলিশ ভিকটিমকে উদ্ধার করে অপহরণ কাজে ব্যবহৃত প্রাইভেটকার জব্দ করে। জব্দকৃত কারের সূত্র ধরে নগরীর ডিসি রোড এলাকা থেকে ড্রাইভার শ্যামলকে রাত সাড়ে দশটার দিকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের ব্যবহৃত আরেকটি কার জব্দ করে পুলিশ। এসময় গ্রেফতার শ্যামল মাদরাসা ছাত্রীকে ধর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করে।
তার দেওয়া তথ্যমতে, পুলিশ পলাতক অপর আসামিদের গ্রেফতারের জন্য গভীর রাতে নগরীর মেরিনার্স রোডের পার্শ্বে অভিযান চালায়। এসময় আসামি শাহাবুদ্দীন ও তার সাথে থাকা সহযোগিরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছুড়ে। এ সময় এক ধর্ষক পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহসিন। তিনি বলেন, নিহত শাহাবুদ্দিন এবং গ্রেফতার শ্যামল দে দুজনেই পেশায় গাড়ি চালক। গত ২৭ জানুয়ারি এক মাদ্রাসা ছাত্রীকে তারা তুলে নিয়ে গিয়ে অস্ত্রের মুখে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ পায় পুলিশ।
ওসি আরও বলেন, অভিযানে পুলিশের তিন সদস্য আহত হয়েছেন এবং ঘটনাস্থল থেকে গুলবিদ্ধ অবস্থায় শাহাবুদ্দীন (২৩) ও একটি ওয়ান শ্যুটার গান, ৪ রাউন্ড কার্টুজ উদ্ধার করে।
এদিকে গত ২৩ জানুয়ারি নগরীর মুসলিম হাইস্কুল থেকে সাইদুল ইসলাম শামীম নামে এক শিশুকে অপহরণ করে দুই ব্যক্তি। স্কুল ছুটি হওয়ার পর দু’জন লোক এসে তাকে তার বাবা পাঠিয়েছে বলে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। রাস্তায় যানজট আছে বলে তাকে নন্দনকানন বাসার দিকে না নিয়ে আন্দরকিল্লার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় শিশুটি চিৎকার করলে তার গলায় ছুরি ধরে মুখ বেঁধে ফেলে তারা। গাড়িতে অনেকক্ষণ ঘুরিয়ে তার বাবার কাছে টাকা দাবি করে অপহরণকারীরা। পরে বিকেল সাড়ে তিনটায় ঘাটফরহাদ বেগ এলাকায় গাড়ি থেকে শিশুটিকে নামিয়ে প্রাইভেটকার চালক দ্রুত পালিয়ে যায়।
এছাড়া গত ২৩ জানুয়ারি বিকেলে কাট্টলী বেড়িবাঁধ এলাকায় একটি সাদা কারের পেছন থেকে এক শিশুকে ফেলে যেতে দেখে এক নারী। খবর পেয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশ। শিশুটির শরীরে বিভিন্ন আঘাতে চিহ্ন ছিল। ৫ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে গতকাল মঙ্গলবার শিশুটি মারা যায়।
এ বিষয়ে নগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার মেহেদী হাসান বলেন, মালিককে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর পর ফ্রি সময়ে কয়েকজন ড্রাইভার একত্রিত হয়ে হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। আমরা চক্রটির ব্যাপারে সব ধরনের তথ্য নিচ্ছি। আশা করছি তাদের দ্রুত গ্রেফতার করতে সক্ষম হবো। তবে আমাদের সতর্ক হতে হবে, কোন দুর্ঘটনা ঘটলে চুপ না থেকে পুলিশের কাছে এসে বিষয়টি জানাতে হবে।

সর্বশেষ