অবশেষে যাত্রা করল ছিনতাইয়ের কবলে পড়া সেই উড়োজাহাজের ১৪০ জন যাত্রী

 

- Advertisement -

মো.মুক্তার হোসেন বাবু : চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নির্ধারিত সময়ের প্রায় বিশ ঘন্টা পর ছিনতাইয়ের কবলে পড়া রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিজি-১৪৭ ফ্লাইটের ১৪০ জন যাত্রী দুবাইয়ের উদ্দেশে যাত্রা করেছেন। গতকাল সোমবার দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে এই বিমানবন্দর থেকে যাত্রীরা অন্য একটি বিমানে করে দুবাই রওনা দেন। এদিকে উড়োজাহাজ ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে কমান্ডো অভিযানে নিহত নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার পিরিজপুর ইউনিয়নের দুধঘাটা গ্রামের পলাশ আহমেদ ওরফে মাহাদীকে শনাক্ত করেছেন তাঁর বাবা। অন্যদিকে বিমান ছিনতাই চেষ্টাকারী পলাশের মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে গত রোববার রাতে দুই ঘণ্টার জিম্মি সঙ্কটের অবসানের পর বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন বলে জানান বিমান বন্দরের কর্মকর্তারা। ছিনতাইয়ের ঘটনার পর থেকে বিমান বন্দরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। রোববার রাত ছাড়াও গতকাল সোমবার সকাল থেকেই বিমানবন্দরে নিরাপত্তাকর্মীর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে বলে জানা গেছে। বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলে সিভিল এভিয়েশনের পক্ষ থেকে এজাহার পাঠানো হচ্ছে। ছ বলে গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সোয়া ৬ টায় জানিয়েছেন পতেঙ্গা থানার ওসি উৎপল কান্তি বড়ুয়া। তিনি বলেন, কপি আসার পর আইনি প্রক্রিয়া নেওয়া হবে।
জানা গেছে, গত রোববার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ বিমানের দুবাইগামী বিজি-১৪৭ ফ্লাইটটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করলে পাইলট তা চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করান। খবর পেয়ে দ্রæতই ঘটনাস্থলে ছুটে যায় ফায়ার সার্ভিসসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এ সময় রানওয়েতে অবস্থান করা প্লেনটি ঘিরে রাখে পুলিশ, র‌্যাব ও সেনা কমান্ডোর সদস্যরা। পরে কমান্ডো অভিযানে ছিনতাই চেষ্টাকারী পলাশ নিহত হন।
চট্টগ্রাম বিমান বন্দর সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার ঢাকা থেকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিমানের একটি বোয়িং-৭৩৭ চট্টগ্রামে পাঠানো হয়। সেই বিমানে করেই ছিনতাইয়ের কবলে পড়া ওই বিমানের যাত্রীদের দুবাই নেওয়া হয়।
চট্টগ্রাম বিমান কর্তৃপক্ষ জানান, উড়োজাহাজটির দুবাইগামী যাত্রীদের গত রোববার রাতেই গন্তব্যে পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু চট্টগ্রামে ঘন কুয়াশার কারণে তা সম্ভব হয়নি। তাই আজ (গতকাল) সোমবার তাদের দুবাই পাঠানো হয়।
চমেক সূত্রে জানা গেছে, বিমান ছিনতাই চেষ্টাকারী পলাশ আহমেদ ওরফে মাহাদীর মরদেহের ময়নাতদন্ত গতকাল সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সম্পন্ন হয়। চট্টগ্রাম মেডিক্যালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. সুমন মুৎসুদ্দী বলেন, আমাদের এখানে দুপুর ১২টায় শুরু করে আমরা তার (মাহাদীর) ময়নাতদন্ত শেষ করেছি। এ ব্যাপারে আদালতের নির্দেশনা ছাড়া আমরা কিছু বলি না। এ বিষয়ে বাইন্ডিংস আমাদের আছে, আমরা বলতে পারি না। তবে বিকেল পর্যন্ত লাশের দাবি নিয়ে স্বজনদের কেউ সেখানে যাননি। তবে পুলিশের প্রাথমিক সুরতহালে জানা গেছে, নিহত যুবকের নাভির ডান পাশে একটি গুলির চিহ্ন রয়েছে। এদিকে সেল ফোনে পলাশের বাবা
পিয়ার জাহান সরদারের সঙ্গে সেল ফোনে কথা বলে জানা গেছে, তিনি তার ছেলের লাশ চান না। তিনি বলেন, দেশের বিরুদ্ধে যে কাজ করেছে, তার লাশ চাই না, এমনটি বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
বিমান বন্দর সূত্রে জানা গেছে, ছিনতাইকারীর কবলে পড়া ১৬২ আসনের ময়ূরপঙ্খী উড়োজাহাজে ইকোনমি ক্লাসে ১৩৩ জন ও বিজনেস ক্লাসে নয়জন যাত্রী ছিলেন। এ ছাড়া পাঁচজন ক্রু, এর মধ্যে দুজন নারী ছিলেন। ককপিটে দুজন পাইলট ছিলেন। উড়োজাহাজটির মডেল বোয়িং ৭৩৭-৮০০। উড়োজাহাজটি ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিমানের বহরে যুক্ত করা হয়।
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার সারওয়ার-ই-জামান বলেন, বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনায় বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীর নির্দেশে মন্ত্রণালয়ের যুগ্নসচিব জনেন্দ্র নাথ সরকারের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটি পাঁচ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, বিমান বন্দরে নিরাপত্তাকর্মীর সংখ্যা বাড়ানোসহ যাত্রীদেরও ভালোভাবে তল্লাশি করা হচ্ছে। বিমানবন্দরে সিভিল এভিয়েশনের নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মী ছাড়াও পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ও আনসার বাহিনীর কর্মীরা কাজ করেন। হঠাৎ করে অন্য বিভাগের নিরাপত্তাকর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধি করতে না পারার কারণে পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। যত দ্রæত সম্ভব অন্য বিভাগের নিরাপত্তাকর্মীর সংখ্যাও বাড়ানো হবে।

সর্বশেষ