দুই সিটিতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত দুই সিটিতে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করতে পারেনি ইসি। নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হলেও দুই সিটিতে ক্ষমতাসীনদের বৈধ ও অবৈধ অস্ত্রের ছড়াছড়ি। সন্ত্রাসীরা এলাকায় এলাকায় দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে। অন্যদিকে দুই সিটিতে আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর বিরুদ্ধে কালো টাকার ছড়ানোর অভিযোগ করলেও এবং প্রতিনিয়ত আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ইসিতে জমা দিলেও নির্বাচন কমিশন অন্ধের ভূমিকা পালন করছে।
রোববার (২৯এপ্রিল) সকালে বিএনপির নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, গতকাল গাজীপুরের মৌচাকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল সাহেবের সভাপতিত্বে এক নির্বাচনী যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি, বাহাউদ্দিন নাসিম এমপি, আহমদ হোসেন এমপি এবং গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহাঙ্গীরকে বিজয়ী করতে আহ্বান জানান। যা সুষ্পষ্টভাবে নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন।
রিজভী বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতার ক্রমাগত অবনতির খবরে গোটা জাতি এখন চরম উদ্বিগ্ন। দেশনেত্রীকে নিয়ে সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিভৎস মূর্তি মানবজাতিকেই শিহরিত করছে। আমি আবারও অতি দ্রুত দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তাঁর পছন্দের হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিপীড়ন নির্যাতন চলছে দুই সিটিতে। বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে, ক্রসফায়ারের ভয় দেখানো হচ্ছে, এমনকি নেতাকর্মীদের বিনা কারণে গ্রেফতার করছে পুলিশ। গত দু’দিন আগে গাজীপুর জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ এস এম সানাউল্লাহসহ ৪৫ জন নেতাকর্মী ২০ দলীয় জোট প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণাকালে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। গাজীপুর নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পুলিশী হয়রানী ও হুমকি ধামকি দিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। গতকালও টঙ্গী বিএনপি’র কার্যালয়ে পুলিশ অবস্থান নিয়ে ভীতির সৃষ্টি করে, যাতে নেতাকর্মীরা ভয়ে দলীয় অফিসে না আসে। বন্ধুরা, গাজীপুরের পুলিশ এখন ভয়ঙ্কর আতঙ্কের নাম। আর এই আতঙ্কের মহানায়ক হচ্ছে এসপি হারুন। যার হাতে বিরোধী দলের এমপি থেকে শুরু করে তৃণমূলের কর্মী পর্যন্ত নিপীড়ণ নির্যাতন ও আর্থিক শোষণের শিকার হয়েছে বারবার। তার দাপটে গাজীপুরে সাধারণ নিরীহ মানুষরা এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। বিরোধী দলের তরুণ কর্মীরা কেউ গাজীপুরে অবস্থান করতে পারে না। গাজীপুরের এক মূর্তিমান আতঙ্কের নাম এসপি হারুন। তার লাগামছাড়া ক্ষমতার অপব্যবহারে গাজীপুরবাসীর স্বপ্নে-দুঃস্বপ্নে দিনরাত্রী এক হয়ে গেছে। আমরা শুরু থেকে গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদের প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছিলাম। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ ব্যাপারে নির্বিকার। আমি অবিলম্বে গাজীপুরের এসপি হারুনের প্রত্যাহার দাবি করছি। একইসঙ্গে দুই সিটিতে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরী এবং কালো টাকার ছড়াছড়ি বন্ধের উদ্যোগ নিতে ইসি’র প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি। আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই-দলীয়করণের মাধ্যমে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে আওয়ামী লীগ যেভাবে নষ্ট করে ফেলছে তাতে তাদের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সমাজের বিশিষ্ট নাগরিকরাও বলেছেন দলীয় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন কখনোই সম্ভব নয়। তাই নির্বাচনের সাত দিন আগে দুই সিটিতে সেনা মোতায়েনের জোর দাবি জানাচ্ছি। আমি ইসি’র সচিবের উদ্দেশ্যে বলতে চাই-আপনার ভূমিকা হতে হবে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীর মতো, কোন দলীয় ক্যাডারের মতো নয়। ইসি’র সচিবের কার্যক্রমে মনে হচ্ছে-তিনি আওয়ামী লীগের পদহীন ক্যাডারের ভূমিকা অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে পালন করছেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নানা অপপ্রচারের জন্য সেল খোলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর একজন উপ-প্রেস সচিবের ফেসবুক আইডিতে নানা মিথ্যা ও বানোয়াট গল্প বানিয়ে প্রচার করা হচ্ছে। এই ধরণের অপপ্রচার নিম্নরুচির পরিচায়ক। যারা কুরুচিসম্পন্ন এবং যারা অপরাজনীতি ও অসভ্যতার চর্চা করে তারাই কেবল অসত্য ও নোংরা রাজনীতির আশ্রয় নেয়। আওয়ামী লীগ কুৎসা সঞ্চারিত মনের বিকারে ভোগে। তাদের ঐতিহ্যে সভ্যতা ও সুরুচির কখনোই কোন নিদর্শন ছিল না। সেজন্য তাদের কোন কথাই জনগণ বিশ্বাস করে না।