খালেদা জিয়াসহ রাজবন্দিদের মুক্তি দাবি ড. কামালের

 

- Advertisement -

‘ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের’ মধ্য দিয়েই দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন।

তিনি বলেছেন, ‘আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম? কী ধরনের বাংলাদেশ থাকবে এটা সংবিধানে লেখা আছে। অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবেন। এ ব্যাপারে কোনো দ্বিমত থাকতে পারে?’ আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, স্বাধীনতা আমরা অর্জন করেছিলাম, স্বৈরাচার থেকে মুক্ত হয়েছিলাম, এগুলো ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ফসল ছিল। আজও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়েই আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লক্ষ্য অর্জন করব।’

রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে মহান স্বাধীনতা দিবসের এক আলোচনা সভায় ড. কামাল হোসেন এসব কথা বলেন।

এ সময় তিনি খালেদা জিয়াসহ রাজবন্দিদের মুক্তির দাবির সঙ্গে সহমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, ‘আজ সবাই বলেছেন যাদের অন্যায়ভাবে বন্দি করে রাখা হয়েছে তাদের মুক্তি দেয়া হোক। এ ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই। সেই লক্ষ্য অর্জন করতে হলে আমাদের ঐক্যকে সুসংহত করতে হবে, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। আপনারা দেখুন আমরা সব অসম্ভবকে সম্ভব করেছি। স্বাধীনতা যুদ্ধ দেখেন আমরা বিজয়ী হয়েছি, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে আমরা বিজয়ী হয়েছি এবং ২০০৮ সালে আমরা যেভাবে অগ্রসর হতে পেরেছি সবকিছু ঐক্যের ফসল।’

ড. কামাল হোসেন বলেন, আজ যে দাবিগুলো এখানে এসেছে আমি পুরোপুরি তাকে সমর্থন করি এবং মনে করি যে, সবাই ঐক্যবদ্ধ হলে এটা অবশ্যই আমরা অর্জন করতে পারব। প্রকৃত অর্থে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারব।

সেটা হলে জনগণ দেশের মালিক হিসেবে ভ‚মিকা রাখতে পারবে। এসব দাবি বাস্তবায়ন করতে হলে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বেরিয়ে ঐক্যফ্রন্টের সব দলকে এক হওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘যারা আজ বাকশালের কথা নতুন করে ভাবছেন, গত ৩০ ডিসেম্বরের প্রহসনের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন করে মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছেন, বাংলাদেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করবার সমস্ত আয়োজন সমাপ্ত করেছেন তারা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ভয় পায়। ভয় পায় এজন্য যে, তিনি যদি বাইরে বেরিয়ে আসেন বা বাইরে থাকেন তাহলে জনগণকে আর কখনই আটকিয়ে রাখা যাবে না, প্রতিরোধ বন্ধ করা যাবে না।’

তিনি বলেন, ‘সরকারের লোকজনের ঘুম নেই। আজকে তাদের এত দুশ্চিন্তা বিএনপিকে নিয়ে বিএনপি নিয়েই সব সময় কথা বলছেন। বিএনপি যদি ব্যর্থ না হয়ে থাকে, বিএনপি যদি আপনাদের সামনে কোনো প্রতিপক্ষই না হয় তবে তাদের নিয়ে এত কথা বলছেন কেন?’

খালেদা জিয়াকে কারাগারে তার প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে- অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) খ্বুই অসুস্থ। কিছুক্ষণ আগে আমি পিজি হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) খবর নিয়েছি। তার জন্য যে মেডিকেল বোর্ড করা হয়েছে সেই বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে অবিলম্বে দেশনেত্রীকে হাসপাতালে স্থানান্তর করা দরকার। তার চিকিৎসাটা অত্যন্ত বেশি প্রয়োজন হয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘সেই নেত্রীকে আটক করে রাখা হয়েছে। তাকে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও নিয়মিত দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না। তার সুচিকিৎসা না করে তার যে প্রাপ্য আইনগত অধিকার যে জামিন তা না দিয়ে আজকে তাকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।’ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ঐক্য সুদৃঢ় আছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, সত্যিকার অর্থে আজকে আমরা জনগণের সঙ্গে নিয়ে মানুষের অধিকার পুনরুদ্ধার করার জন্য এই ফ্রন্ট গঠন করেছি। আজকে সরকার চেষ্টা করছে এই ঐক্যকে ভেঙে ফেলার জন্য। এ ব্যাপারে আমাদের সজাগ থাকতে হবে।’

জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের প্রতি এই সরকারের কোনো মায়া-মমতা নেই, তাদের দায়বদ্ধতা নেই। এরা দায়িত্বহীন। বাকশালের কথা বলছেন, এটা তো দলীয় শাসন। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পরে আওয়ামী লীগ নামে কোনো দল ছিল না এখানে। বঙ্গবন্ধু মারা গেছেন বাকশাল করার কারণে।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বাকশাল কইরা জনগণ থেকে শেখ মুজিবকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। আর শেখ হাসিনা ২৯ ডিসেম্বর ভোট ডাকাতি করে আওয়ামী লীগকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে।’

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবির প্রসঙ্গ টেনে নাগরিক ঐক্যের আহŸায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমি বলতে চাই, আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। যদি মনের মধ্যে কোনো দ্বিধা থাকে, কারও যদি নিজের ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে হিসাব থাকে করে ফেলেন। নিজেদের মধ্যে কোনো ভুল বোঝাবুঝি যদি থাকে সেটা মিটিয়ে নেন। ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে যদি প্রশ্ন থাকে সেটারও নিষ্পত্তি করেন।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালামের পরিচালনায় আলোচনা সভায় গণস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির ড. আবদুল মঈন খান, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মহসিন মন্টু, ড. রেজা কিবরিয়া, কাজী হাবিব, বিকল্পধারার অধ্যাপক নুরুল আমিন, শাহ আহমেদ বাদল, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের হাবিবুর রহমান তালুকদার, ইকবাল সিদ্দিকী, গণদলের গোলাম মাওলা চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

আলোচনা সভায় বক্তৃতা দেয়ার সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে বাহাসে ড. কামাল : বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বলার জন্য গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের ওপর চাপ প্রয়োগ করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এ সময় জিয়ার প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান নিয়ে কথা বলেন ড. কামাল হোসেন। অনুষ্ঠানে ড. কামাল হোসেন বক্তব্য শুরু করলে, দর্শক সারি থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা স্লোগান দেন, ‘স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া- লও লও লও সালাম’। এ সময় তিনি বক্তব্য থামিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেন।

এ সময় দর্শক সারির শুরুতে থাকা বিএনপির একজন নেতা তাকে উদ্দেশ করে বলেন, জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন, এ কথা বলতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ওই নেতাকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দেন। তবে এরপরও কয়েক সেকেন্ড স্লোগান চলে।

এর মিনিট চারেক পর গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু ড. কামালের কাছে এসে তার কানে কানে কিছু কথা বললে তিনি মন্টুকে ধমক দিয়ে বলেন, ‘কেন কথা বলছ, আমি যা বলেছি, তাই বলব। এর বাইরে একটি কথাও বলব না। আর আমি তো সকল বক্তার বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়েছি।’ তবে মন্টু ড. কামাল হোসেনের কানে কানে কী কথা বলেছেন তা জানা যায়নি। যুগান্তর

সর্বশেষ