পুলিশের মারমুখী আচরণ ও নিষ্ঠুরতা ক্ষমার অযোগ্য: বিএনপি

 

- Advertisement -

প্রিয় সংবাদ ডেস্ক:: ভোলায় অবমাননাকর ফেসবুক স্ট্যাটাসের প্রতিবাদে করা বিক্ষোভে পুলিশের নির্বিচারে গুলি পৈশাচিকতাকে হার মানিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। সোমবার নয়া পল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

পুলিশের মারমুখী আচরণ ও নিষ্ঠুরতা ক্ষমার অযোগ্য উল্লেখ করে সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, আইন শৃঙ্খলা-বাহিনীকে জবাবদিহিতা করতে হয় না বলেই সামান্য কিছুতেই নির্বিচারে গুলি করে মানুষ হত্যা যেন এখন নিত্যদিনের ঘটনা। এই ভোটারবিহীন সরকারের দুঃশাসনে মানুষের জীবনের মূল্য এখন পশু-পাখির মূল্যের চেয়ে কমে গেছে।

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, বিদেশে অনেক বড় বড় বিক্ষোভে পুলিশকে একটি বুলেট খরচ না করেও ধৈর্য সহকারে মোকাবেলা করতে দেখেছি আমরা। আর এই দেশে কোন ঘটনা ঘটলেই অসহিষ্ণু আচরণ করে পুলিশ বাহিনী। ক্ষমতা হারানোর শংকায় প্রতিনিয়ত অস্থির সরকার এবং তাদের রক্ষাকারী বাহিনী। বিক্ষোভটি করতে দিলে কি সরকারের পতন হয়ে যেত ?

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, মহান আল্লাহ এবং মহানবী (স) সম্পর্কে অশালীন মন্ত্যবের জেরে সাধারণ মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা প্রতিবাদের জন্য স্থানীয় ঈদগাহ মাঠে জড়ো হয়েছিল। কী ছিল তাদের অপরাধ? তারা একটি অন্যায়ের প্রতিবাদ করার জন্য জড়ো হয়েছিল। এটি তো কোনো অপরাধ নয়। তারা কোনো ভাংচুর করেনি। কারো ক্ষতি করেনি। প্রতিবাদ করা কি অন্যায় ? তারা কি কোনো দাঙ্গায় লিপ্ত হয়েছিল? যেকোন ধর্ম সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করলে মানুষের বিক্ষুব্ধু হয়ে ওঠা নতুন কিছু নয়। এটাই স্বাভাবিক।

বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ আরও বলেন, আমরা আশ্চর্যের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, স্থানীয় প্রশাসন সুকৌশলে ভোলায় মানুষের প্রতিবাদটিকে সাম্প্রদায়িক রূপ দেয়ার ঘৃণ্য চক্রান্ত চালাচ্ছে। অথচ আপনারা ভোলা হত্যাকান্ডের পর সরকার ও প্রশাসনের বক্তব্য এবং মন্তব্য শুনলে অনুধাবন করতে পারবেন, তারা দুঃখ প্রকাশ না করে হত্যকাণ্ডের পক্ষে সাফাই গাইছে। আর প্রধানমন্ত্রী তার স্বভাবসুলভ ভাষায় প্রতিবাদকারীদের প্রতি হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন।

তিনি বলেন, আসল সমস্যাটা হলো এই গণবিরোধী সরকার। ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাতের নির্বাচনের এই সরকার। এই সরকারকে জনগণ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেনি। ফলে জনগণকে সম্মান করা, জনগণের প্রতিবাদের ভাষার প্রতি সম্মান দেখানো, গুরুত্ব দেয়া এইসব গণতান্ত্রিক রীতি ও আচরণগুলো এই সরকার পরোয়া করে না। এই সরকার মনে করে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে দেশের জনগণকে শায়েস্তা করে ক্ষমতায় টিকে থাকা যায়। তাই দেখা যায়, বর্তমান সরকারের কাছে সবচেয়ে বড় শত্রু হলো বিরোধী দল ও বিরোধী মত। মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে এই সরকার ঘৃণা করে।

ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, এই সরকারের সবচেয়ে বড় ভয় দেশের জনগণ। জনগণ একত্রিত হলেই সর্বদা ক্ষমতা হারানোর ভয়ে কাতর এই সরকার মনে করে তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এ কারণেই পুলিশ ভোলায় ঈদগাহ মাঠে জড়ো হওয়া মানুষের প্রতিবাদের ভাষা না শুনে উন্মত্ত হয়ে গুলি করেছে। বর্তমান গণবিরোধী সরকার পুলিশকে একটা কাজই শিখিয়েছে সেটি হলো প্রতিবাদী জনগণের প্রতি গুলি করা ও মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা। অথচ দেশের সংবিধানের ৩৭ অনুচ্ছেদে সুষ্পষ্টভাবে লেখা আছে, সমাবেশের স্বাধীনতার কথা।

গত এক দশকে পুলিশ প্রমাণ পেয়েছে বিরোধী দল ও মতের মানুষকে হত্যা করলে কোনো বিচার হয় না বরং পদোন্নতি হয়। তাদের পুরস্কৃত করা হয়। এ কারণেই ভোলায় জনগণের ভাষা বোঝার চেষ্টা করেনি বর্তমান সরকার।

‘আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, কী হতো প্রতিবাদী মানুষের কথা শুনলে ? সরকারের পতন হয়ে যেত ? কিসের এতো ভয় ? কাদের প্রতি এতো ভয় ? ঘটনার শুরু শুক্রবার থেকে। ঘটনার পর দেয়া পুলিশের ব্যাখ্যায় মনে হয়, তারা পুরো বিষয়টি আগে থেকেই জানতো। তাহলে এতো সময় পেয়েও পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে পারলোনা কেন ? এর কারণ, সরকার ও পুলিশের কাছে জনমতের কোনো মূল্য নেই। তাদের বিশ্বাস জন্মেছে, মানুষকে খুন, গুম, অপহরণ করেই যেকোন পরিস্থিতি সামাল দেয়া যায়।

তিনি বলেন, এই দেশ অনাদিকাল হতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনুপম নিদর্শন হয়ে আছে। এখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের শান্তিপূর্ণ বসবাস। কোন ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করা বা কারো ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্য করা এই দেশের আবহমানকালের ঐতিহ্যে নেই। আমরা মনে করি ভোলার ঘটনা পূর্ব পরিকল্পিত। যে কারনে ভোলাকে রক্তে রঞ্জিত করা হয়েছে তার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদেরকে দৃষ্টান্তমূলক সাজা দিতে হবে।

সরকারের উদ্দেশে ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, জনগণকে যারা অবজ্ঞা করে তাদের পরিণতি শুভ হয় না। গণমানুষের জানমাল নিয়ে আর ছিনিমিনি খেলবেন না। যথেষ্ট হয়েছে। ভোলার গণহত্যার বিচার করতে হবে। ভোলার জনগণের দাবি অবিলম্বে মেনে নিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও ঘোষণা দেয়া হয়, ভোলার হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে বিএনপির উদ্যোগে আগামী ২৩ অক্টোবর বুধবার ঢাকা মহানগরীর থানায় থানায় এবং সারা দেশে জেলা ও মহানগরীতে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হবে।

সর্বশেষ