spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

পান্তা ভাত খেয়ে গোয়ালঘরে জীবন কাটছে বৃদ্ধা নূরজাহানের

spot_img

 

- Advertisement -

প্রিয় সংবাদ ডেস্ক:: ৭২ বছর বয়সী বৃদ্ধা নূরজাহান বিবি। বয়সের ভাড়ে হাটাচলা তার পক্ষে কষ্টসাধ্য। তবুও রোগা শরীর নিয়ে তাকে গ্রামে বের হতে হয়। পেটের তাগিদে লাঠিভর দিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে যেতে হয়। হাত পেতে যায় পায়, তা দিয়েই চালান রান্নাবান্না। একবেলা রাধেঁন, চার-পাঁচবেলা খান। তবে প্রায় বেলার খাবারই তার পান্তা ভাত আর পোড়া মরিচ। কিন্তু যেইদিন শরীর-স্বাস্থ্য ভাল থাকে না, সেইদিন নূরজাহান গ্রামেও বের হতে পারেন না।

সেদিন তার কপালে দুমুঠো খাবার জুটেনা। এভাবেই কষ্টগাঁথা দিন পার করছেন পটুয়াখালীর বাসিন্দা নূরজাহান। জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলার বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের মৌডুবির খাসমহল গ্রামে বসবাস করেন বৃদ্ধা নূরজাহান। ভিটেমাটি নেই তার। খুপরিঘরের মতো দেখতে অন্যের গোয়ালঘরে কোনো মতে মাথা গুজে থাকছেন এই বৃদ্ধা।

ঘরটিতে স্যাঁতসেতে মেঝেতে বেছানো একটি পাটি তার বিছানা। এলোমেলো পুরনো কাপড়-চোপড়। এককোনে চুলা, আর চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হাড়ি-পাতিল। এসব নিয়েই তার একাকি সংসার।

শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, ছয় হাত দৈর্ঘ্য আর পাঁচ হাত প্রস্থের একটি গোয়ালঘরে মানবেতর জীবন যাপন করছেন বৃদ্ধা নূরজাহান। সেই গোয়ালঘরের ভেতরে বাহিরে গবাদিপশুর বর্জ্যের দুর্গন্ধে দুর্বিসহ অবস্থা।

তাকে জিজ্ঞেস করে জানা গেল, অসুস্থ্য শরীর নিয়ে বের হতে পারেননি বলে দুপুরের খাবার যোগাড় হয়নি তার। শেষ বিকেলে পোড়া মরিচ ও প্রতিবেশীর দেয়া পান্তা ভাত দিয়ে পেটের ক্ষুধা নিবারণ করছেন।

কষ্টের জীবনের কথা জানতে চাইলে আশ্রুভেজা চোখে নূরজাহান বিবি বলেন, ‘বাবারে খুব কষ্ট করি। এই শীতে থাহা (থাকা) যায় না। রাইতে বাতাসে গাও, আত (হাঁত) ও পাও ঠান্ডা ওইয়া যায়। থড়থড় কইর‌্যা কাঁপি। অসুখবিসুখ লইয়া বাড়ি বাড়ি যাইতে পারি না। টাহার অভাবে ওষুধ (ঔষধ) কিনতে পারি না। বোলাইলে (ডাকলে) কেউ আয়ও না। নিজে রান্ধি যা, হেইয়াই খাই। এই জীবন আর ভাল লাগে নারে বাবা।’

মমতাজ বেগম নামে বৃদ্ধা নূরজাহানের একজন মেয়ে রয়েছেন। মায়ের এমন হীন অবস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি পরের সংসার করি। বোঝেনতো, ইচ্ছা করলেই মাকে নিয়া রাখতে পারি না। আমি সংসারের কাজকাম কইরা মাঝেমাঝে আইয়া মা’র কাজকাম করে দেই।’

স্থানীয়রা জানায়, ২০০৬ সালে অর্থাৎ ১৩ বছর আগে নূরজাহানের স্বামী আছমত হাওলাদার মারা যান। খাসমহল গ্রামের বেল্লাল হোসেনের সঙ্গে মেয়ে মমতাজের বিয়ে হয়। তবে মা-মেয়ের একই গ্রামে থাকা হলেও সংসারের অভাব-অনটন, দারিদ্র্যতা ও স্বামী দ্বিতীয় বিবাহ করায় মায়ের খোঁজখবর নেয়া তার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না মমতাজের। একারণে স্বামীর মৃত্যুর পর একাকিত্ব জীবন নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন নূরজাহান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সর্বশেষ দেড় বছর ধরে প্রতিবেশী মর্জিনা বেগমের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল নূরজাহান। কিন্তু রোগবালাইর কারণে আর বেশিদিন ঠাঁই হয়নি সেখানে। পরে প্রতিবেশী জহিরুল পঞ্চায়েতের গোয়ালঘরে ঠাঁই হয় তার। সেখানেই তলাপাতা ও পলিথিন দিয়ে চারপাশ বেড়া দিয়ে ঠিকঠাক করে থাকছেন। প্রায় দুই মাস ধরে সেখানেই থাকছেন তিনি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আসলেই নূরজাহান বিবি খুব মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আমরা তাকে বয়স্কভাতার কার্ড দিয়েছি। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আরও সুযোগ-সুবিধা দেয়ার বিষয় চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলাপ করব। তবে তাকে একটি সরকারি ঘর দেওয়ার দাবি জানাই সরকারের কাছে।’

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমান বলেন, অসহায় বৃদ্ধা নূরজাহান বিবির খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। সূত্র:: যুগান্তর

spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

সর্বশেষ