বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না: প্রধানমন্ত্রী

 

- Advertisement -

প্রিয় সংবাদ ডেস্ক:: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ শুক্রবার (১০ই ডিসেম্বর) বিকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে রাজধানীর তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে মুজিববর্ষের ক্ষণগণনা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের ২০ বছরের সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম। বাঙালি জাতি মুক্তি পেয়েছিল। শেখ মুজিবের আহ্বানে সাড়া দিয়ে যার কাছে যা আছে তা নিয়ে যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছিল। শেখ মুজিবের জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হতে পারতো না। আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মমর্যাদা অর্জন করতে পারতাম না। বঙ্গবন্ধুকন্য শেখ হাসিনা আরো বলেন, ২৫শে মার্চ যখন পাকিস্তানি হানাদাররা হামলা শুরু করেছিল ঠিক তখনই জাতির পিতা স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।

৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয় অর্জন করেছিল। কিন্তু পাকিস্তানিরা এ বিজয় মেনে নিতে পারেনি। ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্য দিয়ে যার যা আছে তাই নিয়ে যুদ্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। নির্দেশ দেন বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। বাংলার জনগণ তার নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলেন। ৭ই মার্চের ভাষণের পর ২৫শে মার্চ পর্যন্ত পাকিস্তানি শাসন অচল হয়ে পড়েছিল। ৩২ নম্বর বাড়ি থেকে তিনি যে নির্দেশ দিতেন সে অনুযায়ী দেশ চলতো। ৭ই মার্চের ভাষণের মধ্য দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও যুদ্ধে বিজয় যে অবশ্যম্ভাবী, সে নির্দেশ দিয়েছিলেন। বাঙালি তার নির্দেশ পালন করে সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়েছিল। তিনি বলেন, ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদাররা আত্মসমর্পণ করে। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক চাপে পাকিন্তানিরা বাধ্য হয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে। আমাদের বন্ধুপ্রতীম দেশ ভারত আমাদের সহায়তা করেছিল। আমাদের শরাণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিল, অস্ত্র দিয়েছিল। এমনকি যারা জাতিসংঘে আমাদের সমর্থন দিয়েছিলেন আমি তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করছি। শেখ হাসিনা বলেন, ৮ই জানুয়ারি জাতির পিতা পাকিস্তানি কারাগার থেকে মুক্তি পান। সেখান থেকে লন্ডন যান। তারপর দিল্লি হয়ে তিনি বাংলাদেশে আসেন। ১০ই জানুয়ারি তিনি বাংলার মাটিতে ফিরে আসেন। আমরা ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করেছিলাম সত্য কিন্তু তারপরও বঙ্গবন্ধু দেশে না ফেরা পর্যন্ত সকলের কাছে মনে হয়েছিল স্বাধীনতার আনন্দ যেন অধরা। দেশের মানুষের জন্য বঙ্গবন্ধুর ত্যাগের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলার মানুষের কথা বলতে গিয়ে তিনি জীবনের অনেক সময় কারাগারে কাটিয়েছেন। এ দেশের মানুষ যেন অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা ও উন্নত জীবন পায় এটাই ছিল তার স্বপ্ন। জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবো, এটাই আমার প্রত্যয়।

মুজিববর্ষের ক্ষণগণনা উদ্বোধন ঘোষণা করে তিনি বলেন, আজ জাতির পিতা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিন। এই দিনেই তার জন্মশতবাষির্কী উদযাপনের ক্ষণগণনা ঘোষণা করছি। যে দিনে তিনি তার প্রিয় মাতৃভূমিতে ফিরে এসেছিলেন, সে দিনই তার জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠান উদযাপনের ক্ষণগণনা ঘোষণা করছি।জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফিরে বিজয়ের যে ‘আলোকবর্তিকা’ তুলে দিয়েছেন, তা নিয়েই পথচলার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণগণনার সূচনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী প্রত্যয়ের কথা তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে বিজয়ের আলোকবর্তিকা তিনি আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন, সে মশাল নিয়েই আমরা আগামী দিনে চলতে চাই। বাংলাদেশকে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়তে চাই।
আয়োজকদের ধন্যবাদ দিয়ে ১৯৭২ সালের সেই দিনের ফিরে ঘটনাপ্রবাহে ফিরে যান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সেদিনটিতে আমরা হয়তো বিমানবন্দরে আসতে পারিনি, তখন আমার বাচ্চাটি ছোট ছিল, আমরা এমন অবস্থায় ছিলাম।
কিন্তু আমার মনে পড়ে মা সর্বক্ষণ একটি রেডিও নিয়ে বসেছিলেন, ধারাবাহিক বিবরণ শুনছিলেন, আমরা পাশে বসে সারাক্ষণ ধারা বিবরণী শুনেছিলাম।
স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমার মনে পড়ে বঙ্গবন্ধু বাংলার মাটিতে এসে কিন্তু আমাদের কথা ভাবেননি। তিনি চলে গিয়েছিলেন রেসকোর্স ময়দানে, তার প্রিয় জনগণের কাছে। তারপরে আমরা তাকে পাই। তিনি এদেশের মানুষকে গভীরভাবে ভালোবেসেছেন। চেয়েছিলেন এ দেশের মানুষ সুন্দর জীবন পাবে।
এই প্রেক্ষাপটে কবিগুরুর ’বঙ্গমাতা’ কবিতার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন ’সাত কোটি সন্তানেরে, হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালি করে, মানুষ করনি’। তারই উত্তর (বঙ্গবন্ধু) দিয়েছিলেন এই ১০ই জানুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে।
জাতির পিতা বলেছিলেন, কবি গুরু দেখে যান আপনার সাত কোটি মানুষ আজ মানুষ হয়েছে, তারা যুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছে।” বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে সম্মানের সঙ্গে চলার প্রত্যয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাঝখানে একটা কালো অধ্যায় আমার জীবন থেকে চলে গেছে, সেই কালো অধ্যায় যেন আর কোনো দিন আমাদের দেশের মানুষের উপর ছায়া ফেলতে না পারে।
আমাদের দেশের মানুষ যেন জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলে এই বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতে পারে, সেই কামনা করে ক্ষণগণনার শুভ সূচনা ঘোষণা করছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, চলুন আজকের দিনে আমরা সেই প্রত্যয় নিই যে, এই বাংলাদেশ কারও কাছে মাথা নত করে না, বাংলাদেশ এবং বাঙালি জাতি মাথা উঁচু করে বিশ্বে চলবে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন সেই সোনার বাংলা ইনশাআল্লাহ আমরা গড়ে তুলব। বক্তব্যের শেষে প্রধানমন্ত্রী আবেগ আপ্লুত কণ্ঠে সবাইকে তার সঙ্গে স্লোগান ধরতে বলেন। জয় বাংলা, জয় বাংলা এবং জয় বাংলা বলে বক্তব্যে শেষ করেন তিনি।

সর্বশেষ