spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

বাড়ছে ই-বর্জ্যের ঝুঁকি

spot_img

 

- Advertisement -

নিত্যনতুন আবিষ্কারে প্রযুক্তিতে নতুন সরঞ্জাম আসার পাশাপাশি বাতিল হয়ে যাচ্ছে পুরনোগুলো। দৈনন্দিন জীবনে নষ্ট হয়ে যাওয়া টিভি, ফ্রিজ, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, বৈদ্যুতিক বাতিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য নতুন ঝুঁকি তৈরি করছে। অথচ এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ধ্বংস অথবা রক্ষণাবেক্ষণে নেই কোনো আইন, নীতিমালা কিংবা উদ্যোগ।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এসব ইলেকট্রনিক পণ্যে বিভিন্ন রকমের কেমিক্যাল মেশানো থাকে। এসব কেমিক্যাল পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। শুধু তাই নয় সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকায় যেখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলা হচ্ছে ব্যবহারের অযোগ্য এসব ইলেকট্রনিক পণ্য। এগুলো মাটির সঙ্গে না মেশায় পরিবেশ ঝুঁকি ক্রমেই বাড়ছে। এজন্য খুব শিগগিরই আলাদা আইনের মাধ্যমে এসব ই-বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা এবং রিসাইকেলের ব্যাপারে জোর দেওয়া প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

একটি এনজিওর গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে প্রতিবছর গড়ে ২০ লাখ মেট্রিকটন ই-বর্জ্য তৈরি হয়। অথচ পাশের দেশ ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কায় রয়েছে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আলাদা আইন। বাংলাদেশের বেসরকারি সংস্থা এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো) পরিচালিত ‘ই-বর্জ্য : বাংলাদেশের বর্তমান চিত্র, ২০১৪’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, ২০১১-১২ অর্থবছরে দেশে বাতিল হয়ে যাওয়া ই-বর্জ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ৫১ লাখ মেট্রিক টন। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে দাঁড়ায় ১ কোটি ১০ লাখ টনে। এর মধ্যে শুধু মোবাইল ফোন থেকেই তৈরি হয়েছে ৫১ হাজার ৫০০ টন বর্জ্য। আর টেলিভিশন এবং কম্পিউটার বর্জ্য তৈরি হয়েছে যথাক্রমে ৮ লাখ ৬০ হাজার ও ৩৪ হাজার ৪০০ টন। এদিকে বাংলাদেশে জাহাজভাঙা শিল্পের জন্য আমদানি করা প্রতিটি জাহাজে বিপুল পরিমাণ অব্যবহূত বৈদ্যুতিক পণ্য থাকায় এ থেকে তৈরি হওয়া বর্জ্যের পরিমাণই সর্বাধিক। যা প্রায় ৯০ লাখ মেট্রিক টনের কাছাকাছি। এর বাইরে সিএফএল বাতি, মার্কারি বাতি, থার্মোমিটারসহ বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা ও গৃহস্থালি যন্ত্র থেকে তৈরি হওয়া বর্জ্যের পরিমাণ ২ লাখ ১০ হাজার ৩৩৬ মেট্রিকটন।

এসব ই-বর্জ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত ঝুঁকির বিষয়ে কথা হয় এসডোর সম্পাদিত গবেষণাটির প্রধান সমন্বয়ক ও প্রাণ-প্রতিবেশ বিশেষজ্ঞ (ইকোলজিস্ট) শাহরিয়ার হোসেন বলেন, বছরে যদি তিন কোটি ফোন আমদানি হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে একই পরিমাণ ফোন বাতিলও হয়ে যাচ্ছে। আর এসব বাতিল ফোন পরিবেশের জন্য তৈরি করছে মারাত্মক ঝুঁকি। আমাদের গবেষণা বলছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর ২০ লাখ মেট্রিকটন ই-বর্জ্য তৈরি হয়। তার ২৫ থেকে ৩০ ভাগই আসে মোবাইল ফোন থেকে। এসব পরিত্যক্ত বর্জ্য পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি খাদ্য চক্রের মাধ্যমে মানুষের শরীরের ভিতরে প্রবেশ করে। এসব বর্জ্যের ভিতরে থাকে সীসা, মার্কারি, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম, আর্সেনিকসহ বিভিন্ন ধরনের হেভি মেটাল। এসব শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। উন্নত দেশগুলোতে মোবাইল বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানই বাতিল মোবাইল পুনরায় কিনতে বাধ্য থাকে। বাংলাদেশেও এরকম ব্যবস্থা চালুর জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলে কমবে ই-বর্জ্যের পরিমাণ।

ই-বর্জ্য ফেলার জন্য কোনো নির্দিষ্ট ভাগাড় নেই। হকাররা বিভিন্ন বাতিল বৈদ্যুতিক পণ্য এনে বিভিন্ন স্থানের ভাঙাড়ি দোকানে জড়ো করেন। এগুলো থেকে শুধু প্লাস্টিকটা এবং যেগুলো বিক্রি বা রিসাইকেল করা যাবে তা নেওয়া হয়। বাকি যেগুলো কাজে লাগানো যাচ্ছে না, সেগুলোই সবচেয়ে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

ই-বর্জ্যের ক্ষতির বিষয়ে রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মীরজাদি সেরিনা ফ্লোরা বলেন, ই-বর্জ্য পচনশীল না হওয়ায় এর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। এর থেকে নির্গত বিষাক্ত বর্জ্যের প্রভাবে শরীরে বাসা বাঁধছে দুরারোগ্য ব্যাধি। এসব ক্ষতিকর উপাদানে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরা। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে শিশুদের শারীরিক বিকাশ। দেশের মানুষ প্রতিবছর কী পরিমাণ বৈদ্যুতিক পণ্য ব্যবহার করে বা তার কতটা বাতিল হয়, এর সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত সিরিয়াস মার্কেটিং অ্যান্ড সোশ্যাল রিসার্চ লিমিটেডের ‘ন্যাশনাল মিডিয়া সার্ভে’ বলছে, সে সময় দেশে টিভি সেটের সংখ্যা ছিল দুই কোটির কাছাকাছি। বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল মার্চেন্ডাইজ ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে, দেশের মানুষ প্রতিবছর গড়ে ৩০ হাজার কোটি টাকার বৈদ্যুতিক পণ্য ব্যবহার করে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) হিসাবে, বর্তমানে দেশে প্রায় ১৩ কোটি মোবাইল ফোনের সংযোগ চালু আছে। আর প্রতিদিন এসব ইলেকট্রনিক্স জিনিস নষ্ট হয়ে বাড়াচ্ছে ই-বর্জ্যের পরিমাণ। কিন্তু এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনো উদ্যোগ নেই।

পরিবেশ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ই-বর্জ্যের গুরুত্ব ও ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে এর ব্যবস্থাপনাকে একটি কাঠামোর মধ্যে আনার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। ২০১২ সালে এ বিষয়ে ‘ডিসপোজাল ম্যানেজমেন্ট রুল’ নামের একটি বিধিমালা তৈরি করা হয়। এরপর মতামতের জন্য পরিবেশ অধিদফতর থেকে তা পাঠানো হয় আইন মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু এর পর আর কোনো অগ্রগতি নেই। এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. সুলতান আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশপ্রতিদিন।

spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

সর্বশেষ