অবৈধ ক্লিনিকে অভিযান আজ থেকে

 

- Advertisement -

আগামী ৯৬ ঘণ্টার মধ্যে দেশের সব বেসরকারি অবৈধ ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাডব্যাংক বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠান বন্ধ নিশ্চিত করতে আজ সোমবার থেকে রাজধানীসহ সারা দেশে অভিযান চালাবে অধিদপ্তর। অভিযান চলবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত।

রবিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এ সংক্রান্ত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযানের কথা জানান অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর। তিনি বলেন, ‘আগে আমরা ৭২ ঘণ্টার সময় দিয়ে অভিযান চালিয়েছিলাম। এবার এই অভিযান হবে ৯৬ ঘণ্টার। অর্থাৎ সোমবার (আজ) থেকে এই সপ্তাহের পুরোটাই চলবে। এরপর আমরা অভিযানের সামারি নিয়ে শনিবার বা রবিবার বসব।’

অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে কঠোর অবস্থানে আছেন। তিনি আমাদের আগের চেয়ে জোরদার করে অভিযান চালাতে বলেছেন।’

এর আগে গত ২৬ মে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দেশের সব অনিবন্ধিত হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধের নির্দেশ দিয়ে আরেকটি অভিযান চালায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ওই অভিযানে রাজধানীসহ সারা দেশে বন্ধ হয়েছিল ১ হাজার ৬৪১টি অবৈধ ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাডব্যাংক এবং অবৈধভাবে প্রতিষ্ঠান চালানোর অপরাধে জরিমানা থেকে সরকারের রাজস্ব আয় হয় ২৫ কোটি ১৮ লাখ ৫২ হাজার ৮৬৭ টাকা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ আগস্ট বুধবার দেশের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক সুপারভিশন ও মনিটরিং বিষয়ে এক পর্যালোচনা সভা করে অধিদপ্তর। অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভার পর্যালোচনায় বলা হয়, সময় দেওয়ার পরেও কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স করছে না এবং কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান লাইসেন্সের আবেদনও করছে না। এমনকি লাইসেন্স ছাড়াও প্রতিষ্ঠান চালানো হচ্ছে। বারবার সতর্ক করার পরও কিছু প্রতিষ্ঠান এখনো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংশোধন না করার ফলে আবেদন প্রক্রিয়া অসম্পূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এজন্য বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোকে লাইসেন্স নিতে বাধ্য করতে স্থানীয় প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে অভিযান কার্যক্রম চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

নতুন অভিযানের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত অভিযানের পর গত তিন মাসে যেসব ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাডব্যাংক নিবন্ধন পায়নি এমন প্রতিষ্ঠানও কার্যক্রম চালাতে পারবে না।

এ ব্যাপারে অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, ‘আমরা তিন মাস সময় দিয়েছি। এই সুযোগ যারা নেয়নি এবং এর মধ্যে যারা নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেনি বা যারা আবেদন করেও নিবন্ধন পায়নি, তারা হাসপাতাল, ক্লিনিক খোলা রাখতে পারবে না। যারা নিবন্ধন পায়নি তাদের কার্যক্রম এখনো ত্রুটিপূর্ণ।’

এই কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিকভাবে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানকে আলাদা করতে পারব। এর পরের অভিযান হবে যারা নিবন্ধিত হয়েছে তাদের কার্যক্রমের মান কেমন তা নিয়ে। এরপর নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানকে এ, বি, সি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হবে এবং সেসব প্রতিষ্ঠানের নাম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে। এই তালিকা থেকে মানুষ জানতে পারবে কোন হাসপাতাল কোন মানের।

অবৈধ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা: লাইসেন্স নেই- এমন বেসরকারি ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার-ব্লাডব্যাংকে কর্মরত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান ডা. আহমেদুল কবীর। তিনি বলেন, অনিবন্ধিত বা বৈধতা নেই এমন প্রতিষ্ঠানে কাজ করা চিকিৎসক বৈধ হলেও কর্মকাণ্ড অবৈধ বলে বিবেচনা করা হবে। এক্ষেত্রে এসব চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

৩ মাসে নতুন নিবন্ধন ১৪৮৯: আগের অভিযানের পর গত তিন মাসে দেশের ১ হাজার ৪৮৯টি বেসরকারি ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার-ব্লাডব্যাংক নতুন নিবন্ধন পেয়েছে বলে জানান অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর। তিনি বলেন, এ সময় নবায়ন হয়েছে ২ হাজার ৯৩০টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স। নিবন্ধনের জন্য অপেক্ষমাণ আছে ১ হাজার ৯৪৬টি। লাইসেন্স নবায়নের অপেক্ষায় আছে ২ হাজার ৮৮৭টি হাসপাতাল-ক্লিনিক। নতুন করে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে ২ হাজার হাসপাতাল ও ক্লিনিক।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, দেশে অনুমোদিত ও আবেদনকৃত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা প্রায় ১১ হাজার।

সর্বশেষ