শনিবার, ২৫ জানুয়ারি ২০২৫
spot_img

রাজনৈতিক পরিচয়ে খুনের আসামিদের ছাড় নয়-সিএমপি কমিশনার

অনিক হত্যা : আরো দুই আসামি গ্রেফতার

- Advertisement -

মো.মুক্তার হোসন বাবু : চট্টগ্রাম মহানগরীতে ছুরিকাঘাতে খুন হওয়া আবু জাফর অনিক (২৬) হত্যার দুই আসামিকে ভারত থেকে গ্রেফতারের পর আরো দুই আসামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত সোমবার দিবাগত রাতে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দির চক্রশালা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের সূত্র। গ্রেফতার দুইজন হলেন, ইমন (১৬) ও শোভন (২৪)। এদিকে রাজনৈতিক পরিচয়ে হত্যা মামলার আসামিরা ছাড় পাবে না বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে দামপাড়া পুলিশ লাইন্সের মাল্টিপারপাস শেডে অনিক হত্যার বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান বলেন, হত্যার ব্যাপারে কোনো ছাড় নেই। কোনো হত্যাকারী রাজনৈতিক পরিচয়ে আমাদের কাছ থেকে ছাড় পাবে না। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিএমপি কমিশনার বলেন, বড়ভাই-ছোটভাই কোনো বিষয় না। হত্যাকাণ্ড আমাদের মেইন কনসার্ন। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কোনো বড়ভাই-ছোটভাইও ছাড় পাবে না। তিনি বলেন, সম্প্রতি সিএমপিতে কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আমরা মোটামুটি সব আসামিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। অনিক হত্যার প্রধান চার আসামিকে গ্রেফতার করেছি। ‘ভারতের স্পেশাল টাস্কফোর্সের সহায়তায় আমরা দুই আসামিকে খুব দ্রুত সময়ে ফিরিয়ে আনতে পেরেছি। আরও দুই আসামিকে কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সম্মেলনে সিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পুলিশ জানায়, গত সোমবার দিবাগত রাতে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দির চক্রশালা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় অনিক হত্যার দুই আসামি ইমন (১৬) ও শোভন (২৪) কে। এর আগে গত শুক্রবার (২২ জুন) রাতে কলকাতার ফ্রি স্কুল স্ট্রিট এলাকায় আত্মগোপন থাকা অবস্থায় অনিক হত্যা মামলার দুই আসামি মহিনউদ্দীন তুষার (৩০) ও এখলাছুর রহমান প্রকাশ এখলাছ (২২) কে গ্রেফতার করে ভারতীয় পুলিশ। প্রক্রিয়া শেষে গত সোমবার দুইজনকে বেনাপোল সীমান্তে বাংলাদেশ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।

জানা গেছে, গত ১৭ জুন রাতে নগরীর চট্টেশ্বরী পল্টন রোডে গাড়ির হর্ন দেওয়াকে কেন্দ্র করে ছুরিকাঘাতে খুন হন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মো. নাছির উদ্দিনের ছেলে আবু জাফর অনিক (২৬)। আবু জাফর অনিক পেশায় গাড়ি চালক। সেদিন বিকেল ৫টার দিকে গাড়ির হর্ন দেওয়াকে কেন্দ্র করে আবু জাফর অনিকের ছোট ভাই আবু হেনা রনিকের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় কিছু যুবকের। পরে রাত ৮টার দিকে সেই সমস্যা সমাধানে গিয়েছিলেন বড়ভাই ও বাবা। সেখানে বাবার সামনে অনিককে ছুরিকাঘাত করে মহিউদ্দীন তুষার ও তার সহযোগিরা। পরে এ ঘটনায় ১২ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় মামলা দায়ের করেন অনিকের বাবা মো. নাছির উদ্দিন। মামলার আসামিরা হলেন, মহিউদ্দীন তুষার (৩০), মিন্টু (৩২), ইমরান শাওন (২৬), ইমন (১৬), শোভন (২৪), রকি (২২), অপরাজিত (২২), অভি (২১), বাচা (২২), এখলাস (২২), দুর্জয় (২১) এবং অজয় (২১)।
এদিকে ঘটনার দিন পুলিশ জানিয়েছিল, ওইদিন বিকালে অনিকের ছোট ভাই রনিক ব্যাটারি গলিতে মোটর সাইকেল নিয়ে ঢোকার সময় জোরে হর্ন দেয়। এ নিয়ে স্থানীয় কয়েকজনের বাকবিতণ্ড ও মারামারি হয়। ওই সময় পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। ওইদিন কোতায়ালি থানার ওসি মো. মহসিন জানিয়েছিলেন, ওই এলাকার তুষার, ইমনসহ ১০-১২ জন জোটবদ্ধ হয়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে চট্টেশ্বরী মোড়ে আসেন। সেখানে অনিকদের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় অনিকের বাবা নাসিরও সেখানে ছিলেন। এক পর্যায়ে অনিককে ছুরিকাঘাত করে তারা।
হামলাকারীরা নিজেদের যুবলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে দাবি করলেও স্থানীয় কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিনের ভাষ্য, তারা যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। এলাকায় তুষারের নেতৃত্বে তারা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে বেড়ায়। আর কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান মনসুরের দাবি, হত্যাকাণ্ডের জড়িতরা আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের বিভিন্ন নেতার পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে তা ফেইসবুকে প্রচার করে বিভিন্ন জনের কাছে নিজেদের নেতা পরিচয় দেয় বলে তিনি জানান।

সর্বশেষ