মো.মুক্তার হোসেন বাবু : চট্টগ্রাম মহানগরীর ম্যাক্স হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসা ও অবহেলার কারণে সাংবাদিক কন্যার মৃত্যুতে পুরো চট্টগ্রামের সাংবাদিক সমাজ উত্তাল হয়ে উঠেছে। দৈনিক সমকালের চট্টগ্রাম অফিসের সিনিয়র রিপোর্টার রুবেল খানের মেয়ে রাইফা খানের (৩) মৃত্যুর পর থেকে সাংবাদিক সমাজ বিভিন্ন কর্মসূচীতে ওই চিকিৎসকের শাস্তির দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছে। মিছিল, মিটিং, সভা, সমাবেশ অব্যহত রেখেছে। সাংবাদিকদের একটাই দাবি ওই অভিযুক্ত চিকিৎসকের শাস্তি না হলে আরো অনেক রাইফাকে মৃত্যু আলিঙ্গন করতে হবে। অন্যদিকে চিকিৎসকদের সংগঠন বিএম এর সদস্যরাও সড়ক অবরোধ, চিকিৎসা সেবা বন্ধ রেখে রোগী ও স্বজনদের দূর্ভোগে ফেলেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এদিকে বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালের লাইসেন্স ত্রুটি আছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন। গত রোববার রাতে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি একথা বলেন।
ডা. কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন সাংবাদিকদের জানান, ম্যাক্স হাসপাতালের শিশুর মত্যুর বিষয়ে আমাদের তদন্ত চলছে। তদন্ত প্রতিবেদনে বিস্তারিত উঠে আসবে। প্রাথমিকভাবে ম্যাক্স হাসপাতালের লাইসেন্স ত্রুটি পাওয়া গেছে। তারা অধিদফতর ও বিএমডিসি কোনো অনুমোদন ছাড়াই হাসপাতাল চালাচ্ছে। এ বিষয় আমরা শিগগিরই ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এর আগে রাতে নগরের ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় আড়াই বছরের শিশু রাইফার মৃত্যুর অভিযোগে তদন্ত করতে আসা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক বয়কট করে হাসপাতালের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন সাংবাদিকরা।
বৈঠক চলাকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও সাংবাদিক নেতাদের অভিযোগ শোনেন। এসময় বিএমএর নেতা মুইজ্জুল আকবর চৌধুরী ও ম্যাক্স হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. লিয়াকত আলী আপত্তিকর আচরণ করলে সাংবাদিক নেতারা বৈঠক বয়কট করেন। পরে ম্যাক্স হাসপাতালের সামনে আধা ঘণ্টা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা। পরে বিক্ষোভ মিছিল করে সাংবাদিকরা নগরের চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে অবস্থান নেন। সেখানে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা এসে বৈঠক করেন। বৈঠকে সাংবাদিক নেতারা ম্যাক্স হাসপাতাল ও বিএমএ নেতা ডা. ফয়সাল ইকবালের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের কথা তুলে ধরেন। বৈঠকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের শেখ মো. মনজুরুল রহমান ও মাকসুদুল রহমান ছাড়াও সাংবাদিকদের সংগঠন সিইউজে, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব ও বিএফইউজে নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মূল ফটকের সামনের সড়ক দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ রেখে সীমাহীন জনদুর্ভোগ ও রোগী-স্বজনদের ভোগান্তি সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)। পরে পুলিশি হস্তক্ষেপে সরিয়ে দেওয়া হয় প্রতিবাদ সমাবেশে আসা লোকজনকে। গতকাল সোমবার দুপুর ১২টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত অবরুদ্ধ ছিল প্রবর্তক মোড় থেকে চকবাজার যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি। এ সময় প্রবর্তক, চকবাজার এলাকায় সীমাহীন যানজট সৃষ্টি হয়। এ সময় গাড়িচালক, যাত্রী, পথচারী, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ছাড়াও চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরাও দুর্ভোগে পড়েন। বিএমএ’র রোষানলে পড়ার ভয়ে অনিচ্ছা সত্তে¡ও সিনিয়র-জুনিয়র ও ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ায় ব্যাহত হয় হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম। অবরোধের কারণে যানজটে আটকে পড়া রিকশার যাত্রী জানান, শিক্ষিত মানুষ যদি মূর্খ লোকের মতো সড়ক অবরোধ করে এ জাতির ভবিষ্যৎ কী! এক ঘণ্টা হলো রাস্তায় আটকে আছি। এছাড়া ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় শিশু রাইফার মৃত্যুর অভিযোগে গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে সাংবাদিক সমাজ এক প্রতিবাদ সমাবেশ করে। সমাবেশ থেকে অভিযুক্ত চিকিৎসকের শাস্তির দাবি জানানো হয়।
এদিকে রুবেল খানের পরিবারের অভিযোগ, শিশু রাইফার গলার ব্যথাজনিত কারণে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক ও নার্সদের ভুল চিকিৎসা ও অবহেলার কারণে শিশু রাইফার মত্যু হয়। পরে তাৎক্ষনিকভাবে রাতেই চট্টগ্রামের সাংবাদিকনেতারা একত্রিত হয়ে ম্যাক্স হাসপাতালে অভিযুক্ত ডাক্তারসহ ৩ জনকে থানায় সোপর্দ করলেও এর কিছুসময় পর ডাক্তারদের সংগঠন বিএমএ’র কতিপয় নেতারা চট্টগ্রামের চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়ে আটককৃত ডাক্তার-নার্সকে ছাড়িয়ে নেন।