spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

শিশু রাফিয়ার মৃত্যু: ম্যাক্স হাসপাতাল বন্ধের দাবি

spot_img

মো.মুক্তার হোসেন বাবু : ‘ভুল চিকিৎসায়’ সাংবাদিক কন্যা রাফিয়ার মত্যুর জন্য ম্যাক্স হাসপাতালকে দায়ী করে অবিলম্বে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রামের সাংবাদিক নেতারা। ম্যাক্স হাসপাতালের ১১টি ত্রæট চিহ্নিত করে প্রতিষ্ঠানটিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নোটিশ দেওয়ার পর চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন ও চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলন করে এই দাবি তুলেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক নেতারা। এতে প্রেসক্লাব সভাপতি কলিম সরওয়ার বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ম্যাক্স হাসপাতালে ১১টি ত্রæটি পেয়ে তাদের নোটিশ দিয়েছে। আমরা অবিলম্বে ভুল চিকিৎসা করে মানুষের মত্যু ঘটানো এই হাসপাতালটি বন্ধের দাবি জানাচ্ছি। কোনো কোনো মহল সাংবাদিক ও চিকিৎসকদের দুটি সংগঠনকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। স্পষ্টভাবে বলতে চাই-আমাদের আন্দোলন সমগ্র চিকিৎসক সমাজের বিরুদ্ধে নয়। আমরা রাইফার মত্যুর প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করে সুনির্দিষ্ট চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলছি।
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস বলেন, শিশুকন্যা রাইফার ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত সাংবাদিক সমাজের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন চলবে এবং কেউ সাংবাদিক সমাজকে চিকিৎসক সমাজের মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা করলে তার সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি নাজিমউদ্দিন শ্যামল ও প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শুকলাল দাশ ম্যাক্স হাসপাতাল ম্যাক্স হাসপাতাল বন্ধে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
বক্তারা বলেন, রাইফার মৃত্যুর তদন্তকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চিকিৎসক সমাজ ও সাংবাদিক সমাজকে সাধারণ মানুষের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে। গত বুধবার রাতে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) একটি সভায় বিএনপি ও ড্যাব নেতা ডা. খুরশিদ জামিল চৌধুরী সাংবাদিকদের মারধর করা, স্ট্রাইক করাসহ নানা উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে বিএমএ, সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষের মুখোমুখি করার কথা বলেছেন। সাংবাদিক নেতারা বলেন, বিএমএ একটি ঐতিহ্যবাহী পেশাজীবী সংগঠন। বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচার-সা¤প্রদায়িকতাবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে। বেসরকারি হাসপাতাল ম্যাক্সে সাংবাদিক কন্যার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে একটি চক্র ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায় বলে সিইউজে মনে করে। সাংবাদিক নেতারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সব পেশাজীবী, দেশপ্রেমিক নাগরিক, রাজনৈতিক দলসহ আইন শৃঙ্খলাবাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থাকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির যেকোনো ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সতর্ক থাকার আহŸান জানানো হয়।
এদিকে গত বুধবার ১১ ত্রæটি চিহ্নিত করে ম্যাক্স হাসপাতালকে নোটিশ পাঠায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এতে হাসপাতাল, প্যাথলজি ও বøাড ব্যাংক বিভাগে ১১টি ত্রæটি চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে, ম্যাক্সের অনুকূলে লাইসেন্স নবায়নের জন্য নতুন নবায়ন ফরমে আবেদন করা হয়নি। তাদের ১৫০ শয্যার হাসপাতাল থাকলেও তাদের কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের কোনো নিয়োগপত্র তারা পাননি। এছাড়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, ক্লিনার ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই।
একইসাথে ম্যাক্সের প্যাথলজি বিভাগের অনুকূলেও নতুন নবায়ন ফরমে আবেদন হয়নি যা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিধি মোতাবেক নয়। প্যাথলজির রিপোর্ট প্রদানকারী চিকিৎসক, প্যাথলজিস্ট ও মেডিক্যাল টেকনলিজস্টের কোন তথ্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে পাওয়া যায়নি বলে নোটিশে উলে­খ করা হয়েছে। এছাড়া হাসপাতালে কোন বøাড ব্যাংক নেই বলে নোটিশে উল্লেখ আছে।
রাইফা’র মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে গত রোববার (১ জুলাই) নগরীর মেহেদিবাগে বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতাল পরিদর্শনে এসেছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. জাহাঙ্গীর হোসেন। ঢাকায় ফিরে তিনদিনের মধ্যে তিনি এই নোটিশ পাঠান। ডা. জাহাঙ্গীর হোসেন নোটিশ পাঠানো বিষয়টি জানিয়ে বলেন, নোটিশে উল্লেখ করা ত্রæটি সারাতে না পারলে ম্যাক্স হাসপাতালের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, গলা ব্যাথায় আক্রান্ত দৈনিক সমকালের সিনিয়র প্রতিবেদক রুবেল খানের আড়াই বছর বয়সী মেয়ে রাফিয়াকে গত ২৮ জুন চট্টগ্রাম নগরীর ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৯ জুন রাতে রাফিয়া মারা যায়। রুবেল খানের অভিযোগ, ডাক্তারদের ভুল চিকিৎসা ও অবহেলায় রাফিয়ার মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় সাংবাদিকদের প্রতিবাদের মুখে পুলিশ কর্তব্যরত ডাক্তার ও নার্সকে আটক করলে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল ইকবাল থানায় গিয়ে তাদের ছাড়িয়ে আনেন। এসময় ফয়সাল ইকবাল সাংবাদিকদের সঙ্গে ঔর্দ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন বলে অভিযোগ উঠে। তিনি সাংবাদিকদের কোন ধরনের চিকিৎসা না দেওয়ারও হুমকি দেন। এর প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের সাংবাদিকরা।

spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

সর্বশেষ