পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছে দেশটির একটি আদালত। একই সাথে তার কন্যা মরিয়ম নওয়াজকে সাত বছর ও মরিয়মের স্বামী ক্যাপ্টেন সফদারকে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতির মামলায় শুক্রবার তাদের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে দেশটির জবাবদিহীতা আদালত। ২০১৬ সালে বহুল আলোচিত পানামা পেপারসে নাম আসার পর এই মামলা দায়ের করা হয় নওয়াজ শরিফ ও তার পরিবারের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে।
উপার্জনের সাথে সামঞ্জস্যহীন সম্পদ অর্জনের দায়ে এই শাস্তি দিয়েছে আদালত। একই মামলায় নওয়াজ শরিফের জামাতা ও মরিয়ম নওয়াজের স্বামী ক্যাপ্টেন সফদারকে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এর আগে গত বছর সুপ্রিম কোর্টের রায়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অযোগ্য ঘোষণার পর পদত্যাগ করেছিলেন নওয়াজ।
অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় ১০ বছর ও জাতীয় জবাবদিহীতা ব্যুরোকে(এনএবি) তদন্তে সহযোগিতা না করার নওয়াজকে এক বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। তবে দুটি শাস্তি একসাথে চলবে বিধায় কয়েকমাস আগে অপসারিত পাকিস্তানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে ১০ বছরই জেলে থাকতে হবে।
মরিয়ম নওয়াজকেও লন্ডনে বিলাসবহুল সম্পদ অর্জনের দায়ে ৭ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেয় আদালত। অন্যদিকে মরিয়ামের স্বামী সফদরকে এক বছরের শাস্তি দেয়া হয়েছে জাতীয় জবাবদিহীতা ব্যুরোকে(এনএবি) তদন্তে সহযোগিতা না করার অপরাধে।
পাকিস্তানের ইংরেজী দৈনিক ডন এর অনলাইন সংস্করেণের খবরে বলা হয়, আদলত শুক্রবার এ রায় ঘোষণা করে। কারাদণ্ডাদেশের পাশাপাশি নওয়াজের ৮০ লাখ ব্রিটিশ পাউন্ড ও মরিয়মের ২০ লাখ ব্রিটিশ পাউন্ড জরিমানা করা হয়েছে। এই অর্থ জমা দিতে হবে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে।
নওয়াজ শরিফ ও মরিয়ম লন্ডনে অবস্থান করছেন। নওয়াজের স্ত্রী কুলসুম নওয়াজ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে লন্ডনে চিকিৎসাধীন। এ কারণে নওয়াজ ও মরিয়ম এই রায় অন্তত সাত দিন পিছিয়ে দেওয়ার জন্য আদালতের কাছে আবেদন করেছিলেন; কিন্তু আদালত শুক্রবারই রায় ঘোষণা করে। আগামী সপ্তাহে লন্ডন থেকে নওয়াজ দেশ ফিরবেন এই যুক্তিতে ওই আবেদন করা হলে বিচারক তা খারিজ করে দেন। ক্যাপ্টেন সফদর দেশে অবস্থান করলেও তিনি রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন না।
বেশ কয়েকিদন ধরে শুনানির পর এই রায় ঘোষণা করা হয়। শুক্রবার তিনবার সময় পাল্টানোর পর স্থানীয় সময় সাড়ে তিনটায় রায় ঘোষণা করেন বিচারক। রায় ঘোষণার সময় বিচারক দুই পক্ষের আইনজীবীকে চেম্বারে ডাকেন। সেখানে কোনও সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
স্ত্রী বেগম কুলসুম নওয়াজের চিকিৎসার জন্য গত ১৪ জুন সপরিবারে লন্ডন যান নওয়াজ শরিফ। অ্যাভেনফিল্ড এলাকার বাসায় বসে মেয়ে মরিয়ম আর সাবেক অর্থমন্ত্রী ইসহাক ধরের সঙ্গে বসে মামলার রায় ঘোষণা শোনেন তিনি। লন্ডনের সূত্রের বরাত দিয়ে জিওটিভির খবরে বলা হয়েছে, রায় শোনার পর স্ত্রীকে নিয়ে হারলি স্ট্রিট ক্লিনিকে রওনা দেন নওয়াজ।
রায় ঘোষণার আগে মেয়ে মরিয়ম এক টুইটার বার্তায় বলেন, ‘রায় যাই হোক না কেন কোনও কিছুতেই ছাড় দেওয়া হবে না।’ পরে আরেক টুইটে তিনি লেখেন, ‘এসব কোনও কিছুই নওয়াজ শরিফের জন্য নতুন নয়, অতীতে নির্বাসন, অযোগ্যতা এমনকি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ সামলেছেন তিনি।’
২০১৩ সালে সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন নওয়াজ। গত বছরের জুলাইয়ে পানামা পেপারর্স কেলেঙ্কারির তদন্তের পর তাকে প্রধানমন্ত্রী পদে অযোগ্য ঘোষণা করে আদালত। এরপর পদত্যাগ করেন তিনি। এর আগেও দুইবারও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি তিনি। এর মধ্যে একবার সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারান নওয়াজ।
গত বছর পানামাভিত্তিক আইনি সেবাপ্রতিষ্ঠান মোসাক ফনসেকার ১ কোটি ১৫ লাখ গোপন নথি প্রকাশ করে। তাতে বিশ্বের বহু ক্ষমতাধর, ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিপুল অর্থ পাচারের অভিযোগ সামনে আসে। এতেই নওয়াজ এবং তাঁর চার ছেলেমেয়ের মধ্যে তিনজনের নাম আসে।