চট্টগ্রামে গত দেড় দশকে যোগাযোগ খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়েছে:ওয়াসিকা আয়শা খান

মো.মুক্তার হোসেন বাবু: গত দেড় দশকে যোগাযোগ খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক এবং নবনিযুক্ত অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান এম.পি।

- Advertisement -

প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাবার পর চট্টগ্রামের সন্তান ওয়াসিকা আয়শা খান প্রথমবারের মতো নিজ শহরে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে একথা জানিয়েছেন। আজ সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে প্রতিমন্ত্রী আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে বসেন।

যোগাযোগ খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনে তিনি বলেন, চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন এর প্রমাণ। যোগাযোগের পাশাপাশি সাড়ে ৮ লাখ মানুষ ভূমিহীন গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি এই উদ্যোগে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজ এলাকায় প্রায় ১১০টি পরিবারকে ঘর নির্মাণ করে দিয়েছি।তিনি বলেন, বাংলাদেশ সারাবিশ্বে উন্নয়নের বিস্ময়। এখন দক্ষ মানবশক্তি রূপান্তরের কাজ চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতায় বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর হচ্ছে।

অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারি ও রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবের পরেও আওয়ামী লীগ সরকার সুপরিকল্পিতভাবে দেশ পরিচালনা করছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী চিন্তাধারায় জিডিপি, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি হয়েছে, রপ্তানি আয় বৃদ্ধি হচ্ছে, বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা চলমান আছে। সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের ইশতেহারে প্রত্যেকবার অঙ্গীকারের বাস্তাবায়ন আপনারা দেখেছেন। এসব কেবল সম্ভব হয়েছে জননেত্রী শেখ হাসিনার রূপান্তরকারী নেতৃত্বে। তিনি শুধু আমাদের স্বপ্ন দেখান না, বাস্তবায়নের পথ সুগম করে দেন। যার কারণে বাংলাদেশে ২০০৯ কিংবা ২০০৮-এ যা ছিল সেখান থেকে ২০২৪-এ কতটা পরিবর্তন হয়েছে দেশের জনগণ দেখছে আর গণমাধ্যম দেখাচ্ছে।

ওয়াসিকা বলেন, বৈশ্বিক খাদ্য সংকটের মধ্যেও খাদ্য নিরাপত্তা অব্যাহত আছে। প্রধানমন্ত্রী বেশ কয়েক বছর ধরে বলছেন নিজের অল্প জমি থাকলে সেখানেও চাষ করেন। আমাদের দেশের জমির উর্বরতা বেশি। নিজ স্থান থেকে আমরা একটু চেষ্টা করলে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব এবং নিজের পরিবারের চাহিদা মেটাতে পারে।
তিনি বলেন, আবাসন খাতে উন্নয়নের পাশাপাশি দেশে ইতিমধ্যে করোনার চতুর্থ ডোজ দেওয়া শুরু হয়েছে বলে জানান অর্থ প্রতিমন্ত্রী। এটা কিন্তু অনেক উন্নত দেশেও সম্ভব হয়নি। কোভিডের সময় উন্নত দেশের আগে আমরা টিকা পেয়েছি এবং বিনামূল্যে পেয়েছি। ২০২০ এর করোনা মহামারির সময় অনেকে উন্নত রাষ্ট্র মনে করেছিল আমাদের দেশে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হবে। কিন্তু তা হয়নি।

অনুষ্ঠানে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিক আয়শা খান। শুভেচ্ছা বক্তব্যের পর অর্থ প্রতিমন্ত্রীর কাছে সাংবাদিকরা পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার বিষয়ে জানতে চান। জবাবে ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, টাকা পাচারের বিষয়টা, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফিন্যান্স ইন্টেলিজেন্স ইউনিট) কিন্তু প্রায়শই এটা নিয়ে আলোচনা করে।বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সমঝোতা স্মারক হচ্ছে। যেখানে টাকাগুলো, পাচারকৃত টাকাগুলো থাকে, সেগুলো তখন ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। দুই দেশের মধ্যে আইনগত অ্যাগ্রিমেন্ট হওয়ার পরেই কিন্তু পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এ কাজগুলো চলমান আছে।

টাকা পাচারের বিরুদ্ধে জনমত গঠনের আহ্বান জানিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আপনারা জাতির বিবেক, টাকা পাচারের বিষয়ে আপনাদের কথা বলতে হবে, সবাইকে সচেতন করতে হবে। হুণ্ডিটা দেশের জন্য কতটুকু ক্ষতিকারক, সেটা আপনাদের বলতে হবে, আপনারা বলতে থাকুন। প্রবাসীদের প্রণোদনা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে অর্থ প্রতিমন্ত্রী জাতীয় সংসদে সদ্য পাস হওয়া অফশোর ব্যাকিং আইনের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন।

ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, আমরা দ্বাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশনের শেষদিনে অফশোর ব্যাংকিং লিমিট আইন পাস করেছি। এটা কিন্তু বিভিন্ন ব্যাংকে আগে থেকেই ছিল। নতুন আইনে শুধু কোম্পানি না, ব্যক্তিও অফশোর ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট করতে পারবেন। শুধুমাত্র কারেন্ট অ্যাকাউন্ট না, ডিপোজিট অ্যাকাউন্টও করতে পারবেন। বৈদেশিক মুদ্রায় ডিপোজিট করতে পারবেন।

ডিপোজিটের বিপরীতে আকর্ষণীয় সুদ দেয়া হবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী, ডলারের ডিপোজিটে কিংবা বৈদেশিক মুদ্রার ডিপোজিটে আকর্ষণীয় সুদ দেয়ার জন্যই কিন্তু আইনটা পাস করা হয়েছে। প্রবাসী ভাই-বোনেরা যারা বিভিন্ন দেশে কাজ করেন, বিদেশে কিন্তু ডিপোজিটের সুদ খুব কম, এখানে ডিপোজিটের ব্যবস্থা আছে। এখানে আকর্ষণীয় সুদ দেয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে, এটাই একধরনের প্রণোদনা। এটা কিন্তু খুব বড় একটা আইনগত পদক্ষেপ।

নগরের সার্কিট হাউজে উক্ত অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পটিয়া আসনের এমপি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম, দক্ষিণের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আবদুল কাদের সুজন, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শিবলীসহ আরও অনেকে।

সর্বশেষ