পাকিস্তানের পাঞ্জাবের লাহোরে আজ বৃহস্পতিবার সকালে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এর একদিন আগেই ভারতীয় বিমান পাকিস্তানের অভ্যন্তরে হামলা চালায়। দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে যখন চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে, তখনই এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটল। এদিকে, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরে একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ভারতের হামলার শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসলামাবাদ।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জিও টিভি ও বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রত্যক্ষদর্শী বিস্ফোরণের খবর নিশ্চিত করেছেন। তাৎক্ষণিকভাবে বিস্ফোরণের কারণ জানা যায়নি। এমনকি হামলার বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্যও জানা যায়নি। এমনকি এতে কেউ হতাহত হয়েছেন তাও এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জানা যায়নি।
এদিকে, ভারত গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে হামলা চালানোর সময় পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের নীলাম-ঝিলাম জলবিদ্যুৎ প্রকল্পকে লক্ষ্যবস্তু করেছিল।
মুজাফফারাবাদের ডেপুটি কমিশনার মুদাসসর ফারুক নিশ্চিত করেছেন, জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ‘ইনটেক স্ট্রাকচার’ বা পানি প্রবেশ অবকাঠামোর মুখে হামলা হয়েছে। এতে প্রকল্পের ইনটেক গেটস বা পানি প্রবেশপথ এবং হাইড্রোলিক প্রোটেকশন ইউনিট ক্ষতিগ্রস্ত হয়।ভারতের দাবি, তারা পাকিস্তানের ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামোতে’ হামলা চালিয়েছে।
কাশ্মীরে হামলার জবাবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানায় ভারত। তবে পাকিস্তান হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে এর জবাব দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। পাকিস্তান আরও জানিয়েছে, তারা ভারতের পাঁচটি বিমান ভূপাতিত করেছে, যদিও ভারত এই দাবিকে ‘ভুল তথ্য’ বলেছে।
হামলা ও পরবর্তী সময়ে সীমান্ত গোলাগুলিতে পাকিস্তানের ৩১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত ও প্রায় ৫০ জন আহত হয়েছেন বলে ইসলামাবাদ জানিয়েছে। ভারতের দাবি অনুযায়ী, তাদের ১৩ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৪৩ জন আহত হয়েছেন। সীমান্তে গোলাগুলি রাতের পর কিছুটা কমে আসে বলে ভারতীয় কর্মকর্তারা জানান। ভারত সীমান্ত এলাকার কাছাকাছি অঞ্চলগুলোতে ব্ল্যাকআউট মহড়া চালায়। এর মধ্যে শিখদের পবিত্র স্থান অমৃতসর শহরও ছিল। পাকিস্তানেও অনেক শহরে স্বাভাবিক জীবন ফিরলেও, পাঞ্জাব প্রদেশের সীমান্ত এলাকার হাসপাতাল ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, পাকিস্তান উত্তেজনা কমাতে প্রস্তুত। তবে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার ভারতের হামলার জবাব দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। ভারত বলেছে, পাকিস্তান জবাব দিলে তারাও পাল্টা জবাব দেবে। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি আশা করেন দুই দেশ আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করবে এবং প্রয়োজন হলে তিনি সাহায্য করতে প্রস্তুত।
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকেই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক বৈরী। দুই দেশ তিনবার যুদ্ধে জড়িয়েছে, যার মধ্যে দুবারই কাশ্মীর নিয়ে। বর্তমান উত্তেজনা পাকিস্তানের অর্থনীতির জন্যও চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ দেশটি সম্প্রতি একটি বড় অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে।