মো.মুক্তার হোসেন বাবু : পায়ের হত্যার শোক কাটতে না কাটতেই আবারো বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে আশরাফুজ্জামান রণি নামে এক ব্যক্তিকে মেরে ফেলার অভিযোগ রয়েছে। রণিকে বাস থেকে ফেলে দেয় গাড়ির হেলপার, চাপা দেয় ড্রাইভার। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন আমেরিকা যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া রণি। গত সোমবার এ মর্মান্তিক ঘটনার নিহত রণির পরিবারে চলছে শোকের মাতম। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের পোষ্টমর্টেম শেষে লাশ চট্টগ্রাম নগরের সিটি গেইটস্থ কালিবাজারের বাসায় পৌঁছলে পরিবারে চলে শোকেম মাতম।
গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, রণির স্ত্রী শান্তা ইসলামকে শান্তনা দেয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন আত্মীয়-স্বজনরা। রণির একমাত্র কন্যা ছাবা ইসলামের বয়স মাত্র দেড় বছর। দাদা অলি উল্লাহর কোলে থেকেই বার বার বাবাকে ডাকছে। দাদাকে প্রশ্ন করছে বাবা আসবে না? বাবা কই? ছোট্ট মেয়েটি আর বেশি কথা বলতে না পারলেও শুধু বাবাকে খুঁজছে। কিন্তু কে এনে দেবে তার বাবাকে?
এ ব্যাপারে নগরীর আকবর শাহ থানার ওসি মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি বাসের ড্রাইভার ও হেলপার চলন্ত অবস্থায় রণিকে বাস থেকে ফেলে দেয়। এতে তার মত্যু হয়। ওসি জানান, ৪নং গাড়ির লাইনের ওই বাসের মালিক শাহাব উদ্দিন। ড্রাইভার দিদারুল আলম (৩২) এবং হেলপার মানিক উদ্দিন (৩০) এর ঠিকানা আমরা পেয়েছি। ড্রাইভার ও হেলপারকে ধরার জন্য পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
জানা গেছে, আশরাফুজ্জামান রণির বাবা অলি উল্লাহ আমেরিকা প্রবাসী। তাঁর দুইবোন এবং মা থাকেন আমেরিকাতে। সম্প্রতি রণিও আমেরিকা যাওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু সে আর যেতে পারলো না। যেতে হলো পরপারে। গতকাল মঙ্গলবার বাদে আসর রণির দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
রণির বাবা অলিউল্লাহ বলেন, আমি থানায় মামলা করবো। আমার একমাত্র ছেলেকে এভাবে খুন করতে পারে না। বাস চালকরা খুনি। আজ আমার ছেলেকে খুন করেছে পরদিন অন্য বাবার কোল খালি করবে। তাই সরকারে কাছে বাসের এ অব্যবস্থাপনা ও খুনির বিচার চাই।
প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদ কাউসার হোসেন বলেন, লাশের শরীরের উপর দিয়ে গাড়ির চাকার চলে যায়। চলন্ত গাড়ি থেকে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী সাইফুর রহমান বলেন, চলন্ত বাস থেকে গাড়ির হেলপার রণিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে বাসটি পালিয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ায় সে আঘাতপ্রাপ্ত হন। এতে গাড়ির পেছনের চাকায় সে পিষ্ট হয়।
রণির ফুফাতো ভাই মোহাম্মদ শাহেদ বলেন, আমার ভাইকে ড্রাইভার ও হেলপার পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। ক’দিন পরেই আমেরিকা চলে যাওয়ার কথা ছিল। আমরা এ হত্যাকান্ডের বিচার চাই।
পারিবারিক ষূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার (২৭ আগস্ট) বিকালে আশরাফ উপজেলার ভাটিয়ারী থেকে একটি ৪নং বাস যোগে চট্টগ্রামের দিকে যাচ্ছিলেন। কিন্তু বাস চালকরা অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করায় তার সাথে চালক ও হেলপারের তর্কাতর্কি হয়। তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে আশরাফ বন্ধু–বান্ধবদের ফোন করে জানায়, তার সাথে গাড়িচালক ও হেলপার খুবই খারাপ ব্যবহার করছে। তাকে মারতে চাইছে। বন্ধুরা যেন তাকে সাহায্য করতে সীতাকুন্ড চট্টগ্রাম সীমান্তের সিটি গেট এলাকায় আসেন। সেই মত বন্ধুরা সেখানে এসে পৌঁছানোর আগেই বাসটি সিটি গেট এলাকায় এসে পৌঁছায়। এ সময় চালক ও হেলপার তাকে মারধর করে বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে তার উপর গাড়ি চালিয়ে দেন। এতে মর্মান্তিকভাবে আশরাফের মৃত্যু হয়।
এরআগে গত ২১ জুলাই দিবাগত রাতে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে বাস থেকে ফেলে হত্যা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সায়েদুর রহমান পায়েলকে। হানিফ এন্টারপ্রাইজের বাসে করে ঢাকা যাচ্ছিল সে। কিন্তু হানিফ এন্টারপ্রাইজের ড্রাইভার, হেলপার ও সুপারভাইজার নিমর্মভাবে পায়েলকে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়।