spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

দি বাস্কেটে ভেজাল পণ্য বিক্রিঃ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড়

spot_img

মো.মুক্তার হোসেন বাবু: চট্টগ্রাম মহানগরীতে পোড়াতেল, মেয়াদোত্তীর্ণ কোমল পানীয়, মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ, রং মিশ্রিত মটর ও রং মিশ্রিত চিপস পাওয়াতে ১০ প্রতিষ্ঠানকে ৮১ হাজার টাকা জরিমানা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম। কোতয়ালী, সদরঘাট ও খুলশী থানায় দুপুর ১২ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত চারটি তদারকিমূলক অভিযান পরিচালনাকালে এ জরিমানা করা হয়েছে। এসময় পোড়াতেল, মেয়াদ উত্তীর্ণ কোমল পানীয়, ওষুধ, রং মিশ্রিত মটর ও রং মিশ্রিত চিপস ধ্বংস করা হয়। এদিকে মহানগরীর খুলশীর নামকরা দি বাস্কেট সুপারশপে ভেজাল রং মিশ্রিত মটর ও চিপস বিক্রি করায় সচেতন মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত সোমবার থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দি বাস্কেটের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা তুলে ধরছেন তারা। শুধু তাই নয়, প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অতিরিক্ত দাম নেওয়া, পঁচা মাচ-মাংস বিক্রি, স্টাফদের দায়সারা ব্যবহারসহ আরও অনেক অভিযোগ উঠেছে। এই বাস্কেট সুপার শপকে ভেজাল রং মিশ্রিত মটর ও চিপস বিক্রি করায় গত সোমবার ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার এ জরিমানা করেন।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার খুলশি এলাকার কাই রেস্টুরেন্টকে ডিমের সাথে রান্নাকরা খাবার খোলা অবস্থায় সংরক্ষণ করায় ৪৩ ধারায় ১০ টাকা হাজার, বাস্কেট সুপার শপকে অননুমোদিত রং মিশ্রিত মটর ও চিপস বিক্রি করায় ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।এসময় ১০ প্যাকেট রং মিশ্রিত চিপস ও প্রায় ৩ কেজি রং মিশ্রিত মটর ধ্বংস করা হয়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় এর সহকারী পরিচালক নাসরিন আক্তার এনায়েতবাজার এলাকার মিসকা ধানসিঁড়ি বেকারিকে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মিষ্টি উৎপাদন ও সংরক্ষণ করায় ৪৩ ধারায় ১০ টাকা হাজার, অনন্যা ফার্মেসিকে মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রয়ের জন্য সংরক্ষণ করায় ৫১ ধারায় ৩ টাকা হাজার জরিমানা করেন। এসময় মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধগুলো ধ্বংস করে দেন। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় এর সহকারী পরিচালক জনাব বিকাশ চন্দ্র দাস কর্তৃক কোতয়ালী থানায় এসময় অননুমোদিত ফ্লেবার, সংবাদপত্রে খাবার পরিবেশন ও রান্নাঘরের নোংরা অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের জন্য বাটালি রোডের সুফরা হোটেলকে ৮ হাজার টাকা ও মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ বিক্রয়ের জন্য সংরক্ষণের করার জন্য ইউনিভার্সেল মেডিসিনকে ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান খুলশি থানার ক্যাপসিকাম অ্যারাবিয়ান হাউসকে মেয়াদ উত্তীর্ণ কোমল পানীয় বিক্রয়ের জন্য সংরক্ষণ করায় ৫১ ধারায় ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং ১২ বোতল মেয়াদ উত্তীর্ণ জিরা পানি ধ্বংস করা হয়। সদরঘাট কালীবাড়ি মোড় এলাকার আর আর মেডিকোকে মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ সংরক্ষণ করায় ৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এসময় মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধসমূহ ধ্বংস করা দেয়া হয়।
এদিকে খুলশীর নামকরা দি বাস্কেট সুপারশপে ভেজাল রং মিশ্রিত মটর ও চিপস বিক্রি করায় সচেতন মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। চম্পক চক্রবর্তী নামে এক ভোক্তা ফেসবুকে লিখেন, সুপারশপে এমন অপরাধের জন্য তাদের জেল হওয়া উচিত। কারণ তাদের জরিমানা করা হলে পণ্যের দাম বাড়িয়ে তা তারা ভোক্তাদের থেকে আদায় করে নিবে। এর আগে গত সোমবার দি বাস্কেটে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার। অভিযানে ভেজাল রং মিশ্রিত মটর ও চিপস বিক্রি করায় প্রতিষ্ঠানটিকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
নিশি মনি নামের একজন মন্তব্য করেন এটাকে বাস্কেট বলা যায় না। বলা যায় আবর্জনার বাস্কেট। মোহাম্মদ তৌফিক হাসান রকি বলেন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর জরিমানা করে নিঃসন্দেহে ভাল কাজ করেছেন। তবে জরিমানার পরিমাণ আরো বাড়ানো প্রয়োজন ছিল। শুধু পণ্য ভেজাল নয় স্টাফদের আচরণ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। তানজিলা কানিজ নামের একজন ভোক্তা বলেন, ওদের যে ব্যবহার, পারসেজে যে আছেন উনি প্রফেশনাল কিনা আমার সন্দেহ হয়। আর এডমিন হাতিপু তো বাস্কেটের মালিক।
এ ব্যাপারে ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসেন বলেন, প্রতিবার এভাবে জরিমানা করা হলে কোন সুরাহা হবে না। আমরা সুপারিশ করেছি যাতে জরিমানার বদলে কারাদণ্ড দেওয়া যায়। আর জরিমানা করা হলেও তা তারা পরে পণ্যের দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের থেকে আদায় করে নেয়।এ বিষয়ে একাধিকবার ফোন করে জানতে চাইলেও দি বাস্কেট সুপারশপের ফ্লোর ম্যানেজার আতিক উদ্দিন দস্তগীর কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
দক্ষিণ খুলশীর হাসান নামে আসা ক্রেতা জানান, দীর্ঘদিন ধরে ভেজাল পণ্য বিক্রি করে আসছিল বাস্কেট সুপার শপ। আজকে ম্যাজিস্ট্রেটের হাতে ধরা পড়ায় তাদেরকে জরিমানা করা হয়। খুলশী আবাসিকের তানভির রিপন নামে এক ক্রেতা বলেন, আমি নিয়মিত এখান থেকে বাজার করি। ভাল সুপার শপ বলে অতকিছু যাচাই করি না। সে সুবাধে তারা আমাদের ঠকিয়ে দিচ্ছে।
অভিযান পরিচালনাকারী উপ-সচিব মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, দি বাস্কেট সুপার শপকে অননুমোদিত রং মিশ্রিত মটর ও চিপস বিক্রয় করায় ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এসময় ১০ প্যাকেট রং মিশ্রিত চিপস ও প্রায় ৩ কেজি রং মিশ্রিত মটর ধ্বংস করা হয়েছে। জরিমানা করে সতর্ক করা হয়। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।

spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

সর্বশেষ