বাস চালকদের রেষারেষিতে কলেজছাত্র রাজীব হোসেন জীবন হারিয়েছেন। অসহায় হয়েছে তার মা-বাবা হারা দুই ভাই। গৃহপরিচারিকা রোজিনা পা হারিয়েছে। পা হারা জীবন কতটা যাতনার হবে তা তো সেই বলতে পারে, যার গেছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ধর্ষণের মতো ঘটনাও ঘটছে। এই যে ঢাবির হল থেকে নারী শিক্ষার্থীদের বের করে দেওয়া আবার ফেরত নেওয়া এসব কি মানবাধিকার পরিপন্থী কাজ নয়। এমন প্রশ্ন রেখেছেন মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান।
আমাদের অর্থনীতিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, শুধু রাজীব, রোজিনা বা হল থেকে শিক্ষার্থী বের করে দেওয়ার আমরা মাঝে মধ্যে ঘটতে দেখব আর হা-হুতাশ, দুঃখ করক। কদিন পর সব ভুলে যাব। এটাই তখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে যায়। আমরা অভ্যস্ত হয়ে পড়ি। গ্রহণ করা শিখে যাই।
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রে যদি একধরনের জঙ্গি পুঁজিবাদ ভীত গেড়ে বসে বাস চালক বা মালিকেরা তো বেপরোয়া হবেই। এখানে যে যেভাবে পারছে লুট করছে। একটা লুটেরা অর্থনীতি কায়েম হয়ে গেছে অর্থনীতিতে। বাসগুলোর বাহ্যিক চেহারাগুলোও যদি দেখেন সেগুলো রাস্তায় থাকার কথা নয়। আমাদের বিআরটিএ-এর মতো সংস্থা রয়েছে। বাস সার্ভিসগুলো হয় কি করে, বাসগুলো চলে কি করে, বাস চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা বা তাদের বাস চালানোর যোগ্যতা আছে কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা বা পর্যবেক্ষণ করার দায়িত্ব কোনো না কোনো সংস্থার রয়েছে। তারা আসলে কী করে? জানে না মানুষ। এতে সাধারণ মানুষের নিরাত্তা ঝুঁকি আরও বেড়ে যাচ্ছে।
ড. মিজানুর রহমান বলেন, একটা ক্ষুদ্র কায়েমী স্বার্থকে প্রাধান্য দিচ্ছে আমাদের প্রচলিত ব্যবস্থা। সাধারণ মানুষের স্বার্থ বা চাওয়া-পাওয়ার প্রতিফলন রাষ্ট্রের না নীতিতে, না কর্মপরিকল্পনায় আমরা লক্ষ্য করি। শেয়ারবাজার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, ব্যাংক লুট হয়ে যাচ্ছে, সাধারণ মানুষের টাকা খোয়া যাচ্ছে কে এসে তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন? যারা ব্যাংক লুট করছে, জনগণের টাকা থেকে আরও কোটি কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এরকম অদ্ভুত নিয়ম কেন চালু হবে?
তিনি বলেন, রাষ্ট্রকে তো জনগণের রাষ্ট্র হতে হবে। সাধারণ মানুষের রাষ্ট্র হতে হবে। তখনই কেবল সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়া, আকাক্সক্ষাকে মূল্যায়ন করে। কিন্তু রাষ্ট্র যদি হয় তাদের যারা লুট করলে বা হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করলেও কিছু হয় না, আইন যদি তাদের সমর্থন করে না ধরে সেই রাষ্ট্রের কাছে সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়ার কিছু থাকে না।