রাইফা হত্যা তদন্তে বিএমডিসির টিম: নির্দেশনা মানেননি অভিযুক্ত চিকিৎসকরা

নিরপেক্ষ ভাবে তদন্তের আহবান সিইউজের

- Advertisement -

মো.মুক্তার হোসেন বাবু : চট্টগ্রাম মহানগরীর ম্যাক্স হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় ও চিকিৎসকের অবহেলায় সাংবাদিক কন্যা শিশু রাইফার মৃত্যুর ঘটনায় সরেজমিন তদন্ত করেছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি)। তবে তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্ত চিকিৎসকদের ম্যাক্স হাসপাতালে উপস্থিত থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হলেও, সেই নির্দেশনা মানেননি অভিযুক্তরা। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ম্যাক্স হাসপাতালে যান বিএমডিসির তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রুহুল আমিন ও অপর তিন সদস্য। তদন্ত টিম হাসপাতালে চার ঘণ্টা অবস্থান করেন।
পরে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে তদন্ত কমিটির সদস্য বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) পরিচালক প্রফেসর এম এ বসির বলেন, শিশু কন্যা রাইফার পরিবারের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করবো। এ সময় রুহুল আমিন সাংবাদিকদের বলেন, তদন্তকালীন অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. বিধান রায় চৌধুরী, ডা. দেবাশীষ সেনগুপ্ত, ডা. শুভ্রদেবকে উপস্থিত থাকতে বললেও তারা উপস্থিত হননি। তদন্ত চলছে। তদন্তে দোষী হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এর আগে ম্যাক্স হাসপাতালে রাইফার মৃত্যুর ঘটনায় বিএমডিসি’র গঠিত তদন্ত কমিটি সাক্ষাতের জন্য চিঠি দিয়েছে শিশুটির বাবা সাংবাদিক রুবেল খান ও তার স্ত্রীকে। গত সোমবার সন্ধ্যায় চিঠিটি বাসায় পৌঁছে। চিঠিতে হাসপাতালে ভর্তির দিন থেকে মত্যু পর্যন্ত চিকিৎসা প্রদান সংক্রান্ত তথ্যাদি তদন্ত কমিটির কাছে সরবরাহ করার জন্য বলা হয়েছে। তবে রুবেল খান গতকাল হাসপাতালে উপস্থিত হননি। বিকেলে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,
ম্যাক্স হাসপাতালে আমার দুঃসহ স্মৃতি রয়েছে। সেখানে আমি যাব না। তবে তারা যদি অন্য কোথাও আমার সাথে কথা বলে আমি তাদের সহায়তা করব।
এদিকে চার সদস্যের তদন্ত কমিটিকে সাক্ষ্য দিতে ম্যাক্স হাসপাতালের চেয়ারম্যান শিব শংকর সাহা, মহা ব্যবস্থাপক রঞ্জন প্রসাদ গুপ্ত, শিশু বিশেষজ্ঞ বিধান রায় চৌধুরী, মৃত্যুর দিন দায়িত্বরত চিকিৎসক দেবাশীষ সেন গুপ্ত, শুভ্রদেব, নার্স ও ওয়ার্ড বয়দেরও উপস্থিত থাকতে বলা হলেও অনেকে উপস্থিত হননি।
এদিকে রাইফার মৃত্যুর ঘটনায় বিএমডিসি’র গঠিত তদন্ত কমিটিকে বির্তকের উর্ধ্বে উঠে নিরপেক্ষ ভাবে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার আহবান জানিয়েছে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন-সিইউজে। সিইউজের সভাপতি নাজিমুদ্দীন শ্যামল, সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস মঙ্গলবার প্রদত্ত এক বিৃবতিতে এই আহবান জানান। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, বেসরকারী হাসপাতাল, ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দৈনিক সমকালের সিনিয়র সাংবাদিক ও বিএফইউজের নির্বাহী কমিটির সদস্য রুবেল খানের আড়াই বছরের শিশু কন্যা রাফিদা খান রাইফার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকীর নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি রাইফার মৃত্যুর জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং চিকিৎসকদের অদক্ষতা, অবহেলাকে দায়ি করেন। একই ভাবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের গঠিত তদন্ত কমিটি রাইফার মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করে ম্যাক্স হাসপাতালের ১১টি ত্রæটি চিহিৃত করে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিত্বে দায়ি চিকিৎসক এবং অভিযুক্ত ম্যাক্স হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের জনগনকে সাথে নিয়ে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন ধারাবাহিক আন্দোলন করছে। এই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বিএমডিসি অধ্যাপক মো: রুহুল আমিনকে চেয়ারম্যান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, চিকিৎসায় অবহেলার জন্য ম্যাক্স হাসপাতালের বিরুদ্ধে যেখানে সাংবাদিকদের অভিযোগ রয়েছে সেখানে অভিযোগকারী রাইফার পরিবার এবং অভিযুক্ত চিকিৎসকদের একসাথে ডেকে বক্তব্য গ্রহণ কখনই কাম্য হতে পারে না। এছাড়া ম্যাক্স হাসপাতালে রাইফার পরিবারের নিরাপত্তার প্রশ্নটি জড়িত রয়েছে। কিšুÍ এরপরও তদন্ত কমিটির সদস্যবৃন্দ রাইফার পরিবারের সদস্যদের ম্যাক্স হাসপাতালে গিয়ে তাদের বক্তব্য দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। এতে তদন্ত কমিটির কার্যক্রম নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সাংবাদিকরা তদন্ত কমিটির কাজের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তুছেন।
এ অবস্থায় চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন-সিইউজে বিএমডিসি’র গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত আশা করেছে। চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন মনেকরে তদন্ত কমিটির সদস্যবৃন্দ সকল বির্তকের উর্ধ্বে উঠে মানবিক এবং আইনি দৃষ্টিভঙ্গিতে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। নিজেদের পেশার প্রতি মোহগ্রস্থ না হয়ে নিরপেক্ষ ভাবে ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন ও রাইফার পরিবার তদন্ত কমিটিকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

সর্বশেষ