মো.মুক্তার হোসেন বাবু : পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যানজট মুক্ত করতে সপ্তাহে একদিন ব্যক্তিগত গাড়ী মুক্ত রাখা হয়। সরকার যানজট ও সরকারী ব্যয় কমাতে সরকারী ছুটি দুই দিন করলেও সমাধান আসেনি। তার মূল কারণ পুরো সড়ক জুড়ে ব্যক্তিগত গাড়ী এবং গণপপরিবহনে বেহাল দশা। লক্কর-ঝক্কার বাসগুলির কারনে গণপরিবহনে যাতায়ত করা কঠিন। অন্যদিকে বাস শ্রমিক ও মালিকদের স্বেচ্ছাচারী ও অমানবিক আচরণের কারনে যাত্রী বিশেষ করে নারী যাত্রীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। প্রতিনিয়তই বাস শ্রমিক ও মালিকদের অমানবিক আচরনে সাধারন যাত্রীরা অসহায় ও জিম্মি। সম্প্রতি চট্টগ্রামের একজন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র দূর্ঘটনায় নিহত হলে তার পরিচয় মুছে ফেলতে মুখমন্ডল থেতলে বিকৃত করে দেবার মতো ঘটনা বাড়ছে। নারী যাত্রীরা প্রতিনিয়ত যৌন হয়রানি ও নানা সহিংষতার শিকার হচ্ছে। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত, কলকারখানা বিভিন্ন জায়গায় যাতায়তে ব্যক্তিগত গাড়ীর ব্যবহার বাড়ছে। যার ফলশ্রæতিতে যানজটে আকাল পুরো নগরজীবন। ঘন্টার পর ঘন্টা শ্রম ঘন্টা যেমন নষ্ঠ হচ্ছে, তেমনি নির্ধারিত সময়ে মানুষ গন্তব্যে পৌঁছতে পারছে না। এ অবস্থায় পৃথিবীর উন্নত দেশের আদলে সপ্তাহে একদিন ব্যক্তিগত গাড়ী মুক্ত রাখা, গণপরিবহনগুলির আধুনিকায়ন, চট্টগ্রাম নগরীতে বিআরটিসির বাস চালু, যাত্রীদের প্রতি মানবিক আচরন ও মর্যদাপূর্ন ব্যবহার নিশ্চিত করতে পরিবহন শ্রমিক ও মালিকদের উদ্ধুদ্ধকরণ করার দাবি জানিয়েছে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে।
গতকাল রোববার নগরীর জামালখান প্রেসক্লাব চত্ত¡রে আইএসডিই বাংলাদেশ, কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম, ক্যাব যুব গ্রæপ চট্টগ্রাম মহানগর, এর উদ্যোগে কার ফ্রি এলায়েন্স বাংলাদেশ ও ইনস্টিটিউট অব ওয়েল বিং এর সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে ও ক্যাব যুব গ্রæপের সদস্য সচিব নোমান উল্লাহ বাহারের সঞ্চালনায় সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সরকারী হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, ক্যাব মহানগরের সাধারন সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, ক্যাব যুব গ্রæপের সভাপতি চৌধুরী কে এনএম রিয়াদ, রাজনীতিবিদ সৈয়দ জুলকার নাইন, সুবজের যাত্রার সায়েরা বেগম, সংসপ্তকের নার্গিস চৌধুরী, ওবাইদুর রহমান, প্রশিকার শাহাদত হোসেন, আইএসডিই বাংলাদেশের মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, ক্যাব চান্দগাঁওয়ের জানে আলম, সেলিম সাজ্জাদ, ক্যাব পাঁচলাইশের সেলিম জাহাঙ্গীর, ক্যাব সদরঘাটের শাহীন চৌধুরী, ক্যাব পাহাড়তলীর মিলি চৌধুরী, হারুন গফুর ভুইয়া, ক্যাব ডবলমুরিং এর মোনায়েম বাপ্পী, ক্যাব বোয়ালখালীর আকতার কামাল চৌধুরী, সাংবাদিক প্রশান্ত বড়–য়া, ক্যাব ডিপিও জহুরুল ইসলাম, শাম্পা কে নাহার, রাস্ট্র চিন্তার ফরিদুল হক, লিও আশিকুল আলম, মুহাম্মদ হানিফ, দীপ্ত ঘোষ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, রাজধানী ঢাকায় প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্ম ঘন্টা নষ্ট হচ্ছে। যার বাৎসরিক ক্ষতির পরিমান প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। এভাবে চলতে থাকলে ২০২৫ সাল নাগাদ যানবাহনের গড় গতি দাড়াবে ঘন্টায় ৪ কিঃমি। যান্ত্রিক যানের আধিক্যের কারনে বায়ু দুষণ, শব্দ দূষণ, সময় অপচয়, খোলা জায়গার সংকট এবং সড়ক দুর্ঘটনার পরিমান দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই অবস্থা যদি আমাদের নগর জীবনে হয় তাহলে আগামী প্রজন্মের জন্য সুন্দর ও নিরাপদ নগরী বির্নিমান, শুধু অসম্ভব নয় কল্পনা ছাড়া কিছু হবে না। অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন শহরে বিআরটিসির বাস থাকলেও চট্টগ্রাম নগরীতে লক্কর যক্কর বাসের কারনে ব্যক্তিগত গাড়ী ব্যবহারের প্রবণতা দ্রæত বাড়ছে। এছাড়াও বৃহৎ শিল্প ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির নিজস্ব বাস সার্ভিস না দিয়ে ব্যক্তিগত গাড়ী ব্যবহারকে উৎসাহিত করছে। ফলে যানজট প্রতিনিয়তই বাড়ছে। অন্যদিকে সকাল বেলায় অফিস ও গন্তব্যে যাত্রায় ও সন্ধ্যায় ফিরতে গণপরিবহনের বাসগুলিতে তীব্রসংকট তৈরী করে। যার ভোগান্তি চরমে, সেখানে যাত্রীদের জিম্মি করে বেশী ভাড়া আদায় যেরকম বাড়ছে, তেমনি যৌনহয়রানিসহ নানা ধরনের সহিংষতা ও বাড়ছে। তাই সাধারন জনগনসহ যাত্রীদের জন্য নিরাপদ চলাচল ও নগরী প্রতিষ্ঠায় গণপরিবহনের আধুনিকায়ন জরুরী। একই সাথে ব্যক্তিগত গাড়ী পরিহারে জনগনকে উদ্বুদ্ধকরণ করা প্রয়োজন। যানজটের ভয়াবহ দুর্বিসহ দুরাবস্থা থেকে বাঁচাতে সরকার, স্থানীয় প্রশাসন, সিটিকর্পোরেশনকে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে।