বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী এক-এগারোর মতো পরিস্থিতি সৃষ্টির ষড়যন্ত্রে যুক্ত

 

- Advertisement -

তৌহিদুর রহমান : আগস্ট আসলেই নানা ষড়যন্ত্র শুরু হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৫ আগস্ট কালোরাত্রিতে হত্যা করা হয়েছে। ২১ আগস্ট বৃষ্টির মতো গ্রেনেড ছুড়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার অপচেষ্টা করা হয়েছিল। আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতা-কর্মী মৃত্যুবরণ করেছিলেন। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারা দেশে একযোগে ৫০০ জায়গায় বোমা হামলা হয়েছিল। এবার কিশোর-কিশোরীদের ঘাড়ে চড়ে যে ষড়যন্ত্র তা-ও আগস্ট মাসে হলো। গতকাল রোববার সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা বলেন।
গতকাল শনিবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ মওদুদ আহমেদকে নোয়াখালীতে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে মর্মে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে মনগড়া অভিযোগ উপস্থাপন করায় এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সম্মেলনে বেগম জিয়া ও তারেক রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ এবং দেশবাসীর মনোযোগ আকর্ষণের জন্য মওদুদ আহমেদ ‘অবরুদ্ধ’ করে রাখার নাটক সাজিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন ড. হাছান মাহমুদ।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বেগম জিয়া ও তারেক রহমানের আস্থা হারিয়েছেন অনেক আগে। তারা দুইজনই তাকে সন্দেহের চোখে দেখেন। কিছু দিন আগে পত্রপত্রিকায় দেখেছেন বেগম জিয়ার আইনজীবী প্রতিনিধি দলকে বলে দিয়েছিলেন, মওদুদ আহমেদকে মামলায় যেন না রাখা হয়। বিএনপির নেতা-কর্মীরাও তাকে সন্দেহের চোখে দেখেন। প্রকৃতপক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়নি। এগুলো মনগড়া অভিযোগ। এটি সাজানো নাটক ছাড়া অন্য কিছু নয়।
হাছান মাহমুদ বলেন, প্রকৃতপক্ষে মওদুদ আহমেদকে কোনো ভাবেই অবরুদ্ধ করে রাখা হয়নি। মওদুদ আহমেদ ইতিপূর্বে কখনো ঈদের ৫-৭ দিন আগে গ্রামের বাড়ি যেতেন না। তিনি সচরাচর সবসময় যত দিন ধরে রাজনীতি করছেন, ক্ষমতায় থাকাকালীন এবং কয়েক বছর ধরে ঈদের পর দিন গ্রামের বাড়ি যেতেন। কিন্তু গত রমজানের ঈদে ঈদের আগে গ্রামের বাড়ি গেছেন। এবার পাঁচ দিন আগে গ্রামের বাড়ি গেছেন। রমজানের ঈদের আগে কোটাবিরোধী আন্দোলন হয়েছিল। সেই আন্দোলনে বাতাস দিয়েছিলেন মওদুদ আহমেদসহ আরও অনেকে। সেই আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর মউদুদ আহমেদ গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলেন। তখনো তিনি অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল বলে গত রমজানের ঈদে আগেও নাটক সাজিয়েছিলেন।
এবারও কিছু দিন আগে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আমাদের কিশোর-কিশোরীরা আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। যেটিতে আমাদের পূর্ণ সমর্থন ছিল। সরকারের পূর্ণ সমর্থন ছিল। সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পূর্ণ সমর্থন ছিল। প্রধানমন্ত্রী অর্থাৎ সরকার সব দাবি মেনে নিয়ে বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছেন। সেই আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য মওদুদ আহমেদসহ আরও অনেকেই ২৫-৩০ বছরের যুবক ও মহিলাদের স্কুলের ড্রেস পরিয়ে, পেছনে ব্যাগ ঝুলিয়ে কোমলমতি সাজিয়ে দিয়েছিলেন। সেই ব্যাগের মধ্যে পাথর, চাপাতি, লোহার রডও পাওয়া গেছে। মওদুদ আহমেদরাই এ কাজগুলো করেছিলেন। তাদের সেই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে। সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপের কারণে কিশোর-কিশোরদের ঘাড়ের ওপর চড়ে বন্দুক শিকারের যে পাঁয়তারা সেটি ব্যর্থ হয়েছে।
এরপর তিনি আবার কোম্পানিগঞ্জ-নোয়াখালী গেছেন। তিনি আবার অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে মর্মে নাটক সাজিয়েছেন। বলছেন, পুলিশ তাকে নাকি অবরুদ্ধ করে রেখেছে। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, সেখানে কোনো পুলিশ নেই। তার নির্বাচনী এলাকায় বিএনপি কয়েক ভাগে বিভক্ত। তাদের মধ্যেই দলাদলি আছে, কোন্দল আছে। এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে ঘায়েল করতে সবসময় তৎপর থাকে। তিনি সেটি আড়াল করতে সরকার, আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন। এটি অত্যন্ত নিন্দনীয়।
মওদুদ আহমেদ ও রিজভী আহমেদকে অনুরোধ জানিয়ে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, এ ধরনের নাটক করে আপনাদের মধ্যে যে মতদ্বৈততা দ্বিধাদ্ব›দ্ব সেগুলো যেমন লুকোতে পারবেন না তেমনি মওদুদ আহমেদও তার দলের চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনসহ নেতা-কর্মীদের যে আস্থা হারিয়েছেন এ নাটক করে তা ফিরে পাবেন বলে আমার মনে হয় না।
ড. হাছান মাহমুদ, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ প্রকারান্তরে এক-এগারোর মতো পরিস্থিতি সৃষ্টির ষড়যন্ত্রে যুক্ত আছেন । রিজভী আহমেদ বলেছেন আমাদের কর্মকাণ্ডেই নাকি এক-এগারোর পথ প্রশস্ত হচ্ছে। এ কথা বলার মাধ্যমে রিজভী আহমেদ প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিয়েছেন তারা এক-এগারোর মতো পরিস্থিতি সৃষ্টির ষড়যন্ত্রে যুক্ত আছেন। প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের ষড়যন্ত্র করে লাভ হবে না। বহু ষড়যন্ত্র হয়েছে। ষড়যন্ত্র কোথায় হচ্ছে, কীভাবে হচ্ছে মোটামুটিভাবে সব খবরই সরকারের কাছে আছে। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাস করি। সামনে নির্বাচন। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি সাড়ে নয় বছর ধরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে, জনগণের জীবনমানের উন্নতি হয়েছে, জীবনমান পরিবর্তন হয়েছে, দেশে শান্তি-স্থিতি বজায় রয়েছে সে কারণে জনগণ আবার ভোট দিয়ে শেখ হাসিনাকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেবে। এটি বুঝতে পেরেই তারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। ষড়যন্ত্র ২০১৩, ১৪, ১৫ সালেও হয়েছিল। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান প্রমূখ।

সর্বশেষ