সরকারের দেওয়া সাত শর্তে দুই হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন ইলিশ মাছ ভারতে রপ্তানির অনুমতি পেয়েছে দেশের ৪৯টি রপ্তানিকারক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রফতানি-২ শাখা থেকে রবিবার (৪ সেপ্টেম্বর) এসব রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের নামে রপ্তানির অনুমতি দিয়ে আদেশ জারি করা হয়েছে। প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ ৫০ মেট্রিক টন ইলিশ মাছ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে দেশের ৪৯টি রপ্তানিকারক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে মোট ২ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব তানিয়া ইসলামের সই করা এ আদেশ সংক্রান্ত চিঠি ইতোমধ্যেই আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রক বরাবরে পাঠানো হয়েছে।
আদেশে বলা হয়েছে, আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে ইলিশ রপ্তানির বিষয়ে পাওয়া আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করে শর্তসাপেক্ষে ৪৯ প্রতিষ্ঠানকে নির্ধারিত পরিমাণ ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ ৫০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ইস্যু করা আদেশে ইলিশ রপ্তানির শর্তে বলা হয়েছে— ১. সরকারের রপ্তানি নীতি ২০২১-২০২৪ এর বিধিবিধান অনুসরণ করতে হবে। ২. শুল্ক কর্তৃপক্ষ দ্বারা রপ্তানি করা পণ্যের পরীক্ষা করাতে হবে। ৩. প্রতিটি কনসাইনমেন্ট শেষে রপ্তানি সংক্রান্ত কাগজপত্র রপ্তানি-২ অধিশাখায় দাখিল করতে হবে। ৪. অনুমোদিত পরিমাণের চেয়ে বেশি ইলিশ পাঠানো যাবে না। ৫. এ অনুমতির মেয়াদ ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। তবে সরকার মৎস্য আহরণ ও পরিবহনের ক্ষেত্রে কোনরূপ বিধি-নিষেধ আরোপ করলে তা কার্যকর হওয়ার সাথে সাথে এ অনুমতির মেয়াদ সমাপ্ত হবে। ৬. সরকার প্রয়োজনে যে কোনও সময় ইলিশ রফতানি বন্ধ করতে পারবে। ৭. এ অনুমতি কোনোভাবেই হস্তান্তরযোগ্য নয়, অনুমোদিত রফতানিকারক ব্যতীত সাব-কন্ট্রাক্টে রফতানি করা যাবে না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাওরান বাজারের ইলিশ ব্যবসায়ী ফোরকান মিয়া জানিয়েছেন, ইলিশ রফতানি হলে দেশের বাজারে ইলিশের সরবরাহ কমবে। এতে দামে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ ছাড়াও রফতানি হয় বড় সাইজের ইলিশ। ফলে বাজারে দেশি ক্রেতারা বড় সাইজের ইলিশের দেখা পাবেন না।
এ প্রসঙ্গে পিরোজপুরের পাড়ের হাটের ইলিশ ব্যবসায়ী তোফাজ্জল হোসেন জানিয়েছেন, এটি একটি ভালো সংবাদ। ইলিশ রফতানির অনুমতি দিলে আমরা ভালো দাম পাবো। তবে রফতানির নামে যেনো ইলিশ পাচার না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। নতুবা আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো, দেশ রাজস্ব হারাবে। ক্রেতারাও বঞ্চিত হবেন।
এদিকে রাজধানীর বাজার ঘুরে জানা গেছে, ৪০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ইলিশের দাম প্রতিকেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। ৮০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ওজনের প্রতিকেজি ইলিশের দাম ১২০০ টাকা। এর বড় সাইজের ইলিশ সাধারণত তেমন পাওয়া যায় না। তবে বড় সাইজ মানে দেড় কেজির ওজনের ইলিশ ২ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
মৎস্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত ২০০৮-০৯ অর্থবছরে যেখানে ইলিশের উৎপাদন ছিল ২ লাখ ৯৯ হাজার মেট্রিক টন সেখানে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তা বেড়ে ৫ লাখ ১৭ হাজার টনে উন্নীত হয়েছে। এমনকি মা-ইলিশ রক্ষা পাচ্ছে এবং নিরাপদে ডিম ছাড়তে পারছে বলেই ‘জাটকা’ আজ পদ্মা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, সুরমায় বিস্তৃতিলাভ করেছে। পদ্মানদীর দুইপাড়ের জেলাগুলো যেমন— ফরিদপুর, রাজবাড়ী, পাবনা, কুষ্টিয়া, নাটোর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং যমুনা নদীর তীরবর্তী জেলা সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়েছে। জাটকা ও মা-ইলিশ রক্ষায় চলমান কার্যক্রমগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে সারাবছর ইলিশের প্রাপ্যতা নিশ্চিত হবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
উল্লেখ্য, মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ইলিশের অবদান ১ শতাংশ। দেশের মোট মাছের ১১ শতাংশ উৎপাদন আসে ইলিশ থেকে। পাঁচ লাখ জেলে সরাসরি ইলিশ আহরণের সঙ্গে জড়িত। আরও ২০ লাখ লোকের জীবিকার প্রধান উৎস ইলিশ। একটি দেশের অর্থনীতি একটি মাছকে কেন্দ্র করে পাল্টে যেতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তারা জানিয়েছেন, ২০০৭ সাল থেকে জাটকা রক্ষায় সরকার পদক্ষেপ নেওয়ার পর ইলিশের উৎপাদন ও বিস্তৃতি বেড়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে আরেকটু নজর দিলে বাংলাদেশের নদীগুলো ইলিশে ভরে উঠবে।