বাংলাদেশে ধর্মীয় সম্প্রীতির বিষয়ে সত্যিকারের তথ্য পাওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিক, সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীদের বাংলাদেশ সফরের আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ মঙ্গলবার দেশটির সিনেটর গ্যারি পিটারসের সঙ্গে আলাপের সময় তিনি এই আহ্বান জানান।
মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ডেমোক্র্যাট দলীয় সিনেটর গ্যারি পিটারস আজ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তাঁর সরকারি বাসভবন যমুনায় সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, সিনেটর পিটারস ড. ইউনূসকে বলেন, ডেট্রয়েটসহ তাঁর নিজ নির্বাচনী এলাকায় বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত অনেক মানুষের বাস। তাঁদের অনেকে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়ে অনেক ভুল তথ্যের প্রচার আছে। এর কিছু কিছু যুক্তরাষ্ট্রে সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোকে উদ্বিগ্ন করে।জবাবে অধ্যাপক ইউনূস সিনেটরকে বলেন, ‘আপনাদের সাহায্য আমাদের দরকার। দয়া করে আপনার বন্ধুদের বলুন বাংলাদেশ সফর করতে। এভাবেই আমরা ভুল তথ্যের মাধ্যমে ছড়ানো অপপ্রচার মোকাবিলা করতে পারি।’
ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা সিনেটরকে বলেন, গত আগস্টে পটপরিবর্তনের পর; বিশেষ করে হিন্দুসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর যেসব হামলা হয়, সেগুলো রাজনৈতিক কারণে হয়েছে; ধর্মীয় কারণে নয়। কিন্তু সরকার হামলাগুলোয় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে।ড. ইউনূস মার্কিন সিনেটরকে এই নিশ্চয়তা দেন যে তাঁর সরকার বর্ণ, ধর্ম, গোত্র ও লৈঙ্গিকভেদে প্রত্যেক নাগরিকের মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
গ্যারি পিটারস বাংলাদেশে সংস্কার উদ্যোগ, সংস্কার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি কমিশনের প্রতিবেদন এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের কাছে জানতে চান।
রাজনৈতিক দলগুলো কম সংস্কার চাইলে আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে—এ কথা পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধান উপদেষ্টা। আর দলগুলো সরকারের কাছে বেশি সংস্কার চাইলে কয়েক মাস পর ভোট হবে বলেও জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা মার্কিন রাজনীতিককে বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হবে। উৎসবের পরিবেশে এবার ভোট হবে, যেমনটা অতীতে হয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ কমিশনগুলোর সুপারিশের ভিত্তিতে সব রাজনৈতিক দল জুলাই সনদে সই করবে এমনটা জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, জুলাই সনদ দেশের ভবিষ্যৎ গতিপথ ঠিক করে দেবে।
গ্যারি পিটারস অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার পরিকল্পনার প্রশংসা করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক রূপান্তর হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। দুই নেতা যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য সামাজিক ব্যবসা, ক্ষুদ্রঋণসহ বিভিন্ন উপায় নিয়েও কথা বলেন।
দুই দিনের সফরে প্রভাবশালী এই সিনেটর গতকাল সোমবার রাতে ঢাকায় পৌঁছান। সিনেটর পিটারস পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌফিক হোসেন ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
গ্যারি পিটারস মার্কিন কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান। তিনি সিনেটে সশস্ত্র বাহিনী, বাণিজ্য, বিজ্ঞান ও পরিবহনবিষয়ক কমিটি, সাইবার সিকিউরিটিসহ বিভিন্ন উপকমিটির সদস্য।
সেনাবাহিনীর ফেসবুক পোস্টের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে সেনাসদরে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে সাক্ষাৎকারটি অনুষ্ঠিত হয়। এই সাক্ষাতে তাঁরা পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নত করার বিষয়ে কথা বলেন।
ঢাকায় মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি এ্যান জ্যাকবসন বৈঠকগুলোয় উপস্থিত ছিলেন। সিনেটর পিটারসের আগামীকাল বুধবার ঢাকা ত্যাগ করার কথা রয়েছে।