বইয়ে এসকে সিনহার বক্তব্য জাতির জন্য লজ্জাজনক

 

- Advertisement -

ডেস্ক রিপোর্ট: সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তার বইয়ের মাধ্যমে যা প্রকাশ করলেন, তা জাতির জন্য লজ্জাজনক বলে মন্ত্রব্য করেছেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন।

তিনি বলেন, সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবী হিসেবে বিষয়টি আমাদের বিবেককে দংশন করে। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বিচার বিভাগের ওপর চাপ ও নগ্ন হস্তক্ষেপ জাতিয় কোনো মঙ্গল বয়ে আনবে না।

সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার প্রকাশিত বই প্রসঙ্গে শুক্রবার সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের শহীদ শফিউর রহমান হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সরকারকে ইঙ্গিত করে জয়নুল আবেদীন বলেন, বাংলাদেশ সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর রায়টি তাদের পক্ষে নিতে চেয়েছিলেন এবং বিচার বিভাগকে পূর্ণকারায়ত্ত করতে চেয়েছিলেন। সাবেক প্রধান বিচারপতি সিনহা প্রচণ্ড চাপের মুখেও ষোড়শ সংশোধনীর রায় সরকারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে দিয়েছিলেন। সরকার এই রায়ের পর থেকে পার্লামেন্টে এবং বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বিচারপতি সিনহার পদত্যাগ দাবি করছিল।

কিন্তু বিচারপতি সিনহা সেই চাপের মুখে নতিস্বীকার না করায় তাকে অবকাশকালীন ছুটি শেষের দুই দিন আগে আপিল বিভাগের অন্য চার বিচারপতিকে তার (এসকে সিনহা) সঙ্গে একই এজলাসে না বসার জন্য চাপ প্রয়োগ করে।

ওই চার বিচারপতির মধ্যে পরবর্তী সময়ে জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এমএ ওয়াহ্হাব মিঞাকে প্রধান বিচারপতি করার প্রলোভন দেখানো হয়েছিল। পরে তিনি (বিচারপতি এমএ ওয়াহ্হাব মিঞা) বিচারপতি সিনহাকে বলেছিলেন, রাষ্ট্রপতি আমাদের বলেছেন, আপনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ আছে, তাই আমরা আর আপনার সঙ্গে বিচারকার্যে বসতে চাই না। বিচারপতি ওয়াহ্হাব মিঞার এই বক্তব্যও ছিল সংবিধান পরিপন্থী। তবে এতকিছু সত্ত্বেও বিচারপতি সিনহা অটল ছিলেন, তিনি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা পরিপন্থী কোনো চাপের মুখে নতিস্বীকার করবেন না। কিন্তু সরকার চাপ প্রয়োগ করে সিনহাকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করে এবং পরবর্তী সময়ে পদত্যাগ করতেও বাধ্য করে।’

সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির এ সভাপতি অভিযোগ করে বলেন, আমরা আইনজীবীরা তখন জাতির সামনে পরিষ্কার করেছি যে, বিচারপতি সিনহা অসুস্থ নন এবং তখনই বলেছিলাম, ষোড়শ সংশোধনী রায়কে কেন্দ্র প্রধান বিচারপতি সিনহাকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। বিচারপতি সিনহাকে এই ধরনের চাপ প্রয়োগ করে পদত্যাগ করিয়ে পুরো বিচার বিভাগকে এখন নির্বাহী বিভাগের আওতাধীন করা হয়েছে। নিু আদালতগুলো স্বাধীনভাবে বিচারকার্য পরিচালনা করতে পারছে না বা পরিচালিত হচ্ছে না। দেশের মানুষ আজ অসহায়। সরকারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো রায় বা আদেশ দিলে তার পরিণতি কী হবে, সেটা সাবেক প্রধান বিচারপতি সিনহার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেয়।

বাংলাদেশে বর্তমান বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগের চাপের মুখে রয়েছে। অর্থাৎ বিচার বিভাগ পুরোপুরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে বলেও সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়।

জয়নুল আবেদীন আরও বলেন, বিচারপতি সিনহার পদত্যাগের পর খালেদা জিয়ার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। দেশের মানুষের মধ্যে বিশ্বাস জন্মেছে, ওই রায়টিও (জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট) বিচার বিভাগের ওপর চাপ প্রয়োগ করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দেয়া হয়েছে।

এ সময় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি গোলাম মোস্তফা, গোলাম রহমান ভূঁইয়া, কোষাধ্যক্ষ নাসরিন আক্তার, সিনিয়র সহ-সম্পাদক কাজী মো. জয়নুল আবেদীন, সদস্য আহসান উল্লাহ, ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান, অ্যাডভোকেট আরিফুল ইসলামসহ বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা।

যুগান্তর

সর্বশেষ